এনআরসি চালু হওয়া মাত্র জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের হেনস্থা শুরু হবে। দুর্নীতি এবং স্বজনপােষণের কারণে যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা একেবারেই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠবে। কিন্তু সে ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল হেনস্থার ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে, এমনই মত লেখক চেতন ভগতের। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে চেতন ভগত জানিয়েছেন, যেহেতু এনআরসি রূপায়ণের ক্ষমতা পাচ্ছেন সরকারি বাবুরা, তাই সেই ক্ষমতার অপপ্রয়ােগ অবশ্যম্ভাবী। এই ক্ষমতার কারণে ওঁদের বাড় বেড়ে যাবে। সেখানেই ঘুষ নেওয়া শুরু হবে। এনআরসি’র নিয়মনীতি যত কঠিন করা হবে, সে নিয়ম রক্ষা করতে না পারলে সাধারণ মানুষকে তত মাশুল দিতে হবে। তা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট সরকারি বাবু মানুষের নথি বাতিল করে দেবে। এর পরে তাকে ২০ বছর ধরে কোর্টের চক্কর কাটতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আপনার এ দেশে জন্মের সার্টিফিকেট রয়েছে।
এই ঘটনার উদাহরণস্বরূপ অসমের কথা বলেন চেতন ভগত। তাঁর কথায়, ‘অসমে ১৯ লক্ষ লােক ডিটেনশন ক্যাম্পে রয়েছেন। সকলেরই কি নথি ছিল না? ধরে নেওয়া যায় তাদের মধ্যে অনেকেই সরকারি বাবুদের সন্তুষ্ট না করতে পারার কারণে বাতিল হয়েছেন নাগরিকপঞ্জি থেকে। তেমনটাই হতে থাকবে দেশজুড়ে’।
তিনি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে আরও বলেন এমনটা হতেই পারে এনআরসি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এসে আপনাকে বলল, তালিকায় আপনার নাম রাখব না বা পরেরবার রাখব, যদি আপনি ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। এখানেই শুরু হয়রানি। তাই বিশেষজ্ঞদের পর্যালােচনা বিশ্লেষণ করে দাবি করা হচ্ছে, ডিটেনশন ক্যাম্পের চেয়ে তালিকায় নাম রাখাটা বেশি উদ্বেগের। সেক্ষেত্রে মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুরাও ভুক্তভােগী হলে। ঘুষ না দিতে পারলে হয়রানির শিকার তারাও হতে পারেন। এদেশেই যে আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন, তা প্রমাণ করতে বছরের পর বছর লেগে যাবে’। অবশ্য চেতন ভগত প্রথম নন। এ বিষয়ে মতামত রেখেছেন নােবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ মুখােপাধ্যায়ও। তাঁরও আশঙ্কা, সরকারি আধিকারিকদের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া বিপজ্জনক।
চেতন ভগত আরও জানিয়েছেন, ‘এই ভয় একেবারেই অমূলক নয়। কারণ বিজেপি চিরকালই মেরুকরণের রাজনীতি করেছে। অন্য কোনও সরকার এনআরসি করলে তবু মানুষের মধ্যে খানিকটা বিশ্বাস থাকত। কিন্তু এই সরকার এমন একটা দুশ্চিন্তা চারিয়ে দিয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে যে মানুষ কোনও কিছু বিশ্বাসই করতে পারছে না। যদি ধরুন অমিত শাহ এসে আপনার কাছে নথি চাইছে, আপনার সন্দেহ হবে। কেন নথি চাইছে? আমার পরিচয়ের কারণে কি আমায় তাড়িয়ে দেওয়া হবে? বিজেপি এভাবেই মেরুকরণ করেছে মানুষের মধ্যে’।
ঠিক এই জায়গা থেকেই এনআরসি সমস্যা নিয়ে সারা দেশের বাসিন্দারা ধর্মনিরপেক্ষ ভাবেই ভােগান্তির শিকার হবেন বলে মনে কাছে লেখক। তাঁর আরও দাবি, ভােটার কার্ড, পাসপাের্ট, আধার কার্ড একটা মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ হওয়া উচিত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কতবার মানুষকে প্রমাণ করতে হবে নিজের পরিচিতি?’
চেতন ভগতের দাবি, ‘এত টাকা খরচ করে একটা অর্থহীন হাঙ্গামা করা হচ্ছে। একটা গৃহযুদ্ধ তৈরি করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। সারা দেশের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষেরও যদি সব নথি না থাকে, তাহলেও সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৬ কোটি। এত মানুষ কোথায় যাবে? সবরকম ব্যবস্থা ও পদ্ধতি আরও গুছিয়ে তবেই এনআরসি লাগু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে’।