গণতান্ত্রিক পরিকাঠামােয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীরা কখনই দেশবিরােধী বা দেশদ্রোহী হতে পারেন না। বৃহস্পতিবার বােম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। উল্লেখ্য জনৈক ইফতেকার শেখ ও অন্যান্য পঁয়তাল্লিশজন সিএএ আইনের বিরুদ্ধে এক অবস্থান বিক্ষোভ করতে চাইলে বিদ জেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নাগরিকরা হাইকোর্টে বিক্ষোভ দেখানাের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
আবেদনের ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি নলবাদে এবং এম জি সিউলিকার তাদের নির্দেশে বলেন, যেকোনও আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেই তাদের দেশদ্রোহী বা দেশ বিরােধী বলা যায় না। বিক্ষোভকারীরা সংশ্লিষ্ট আইনের বিরােধিতা করতেই পারেন। মনে রাখতে হবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও স্বাধীনতার প্রাপ্তির অন্যতম উপায় হিসেবে গণ্য। আর আজও সেই অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। এক্ষেত্রেও আবেদনকারী ও তাঁর সঙ্গীরা শান্তিপূর্ণভাবেই নির্দিষ্ট আইনের বিরােধিতা করতে চাইছেন। সারা দেশে এই আইনের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। এর মধ্যে দিল্লির শাহিন বাগে প্রায় দুই’মাসের বেশি সময় ধরে একটি সড়ক অবরােধ করে মানুষ বিশেষত মহিলারা অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন।
আদালত নির্দেশে জানিয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মের ভিত্তিতে বিতাড়িত মানুষের মধ্যে মুসলিম ব্যতীতদের নাগরিক অধিকার দেওয়ার জন্যই সিএএ প্রণয়ন করেছে সরকার, যা দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বিরােধী বলে আবেদনকারী তার আবেদনে জানান। নির্দেশে বলা, ভারত গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র এবং আমাদের সংবিধান আইনের শাসনের দ্বারা পরিচালিত এবং সংখ্যাধিক্যের দ্বারা শাসিত নয়। যেহেতু মুসলিম ব্যতীত শব্দটি আইনে রয়েছে তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মনে করতেই পারেন এই আইন তাদের স্বার্থবিরােধী এবং সেখানে বিরােধিতার সুযােগ রয়েছে বলে নির্দেশে জানানাে হয়।
আদালত সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মনােভাবকে মর্যাদা দিতে বদ্ধপরিকর কারণ তা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় নাগরিকের প্রতিবাদ করার অধিকার প্রশাসন কেড়ে নিতে পারে না। এটাই রাজনৈতিক সরকারের সমস্যা। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলােচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। কেউ শান্তিপূর্ণভাবে কোনও আইনের বিরােধিতা করলেই তাকে বিশ্বাসঘাতক বা দেশদ্রোহী বলা যায় না জানিয়ে দিল বম্বে হাইকোর্টের অওরঙ্গাবাদ বেঞ্চ। নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের অবস্থান বিক্ষোভে পুলিশি হস্তক্ষেপ খারিজ হয়ে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করা হয়। তার প্রেক্ষিতেই এই মতামত জানান হাইকোর্ট।
বম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কেউ কোনও প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমন তাে হতে পারে না। যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের স্বার্থরক্ষাও আদালতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই আদালত জানিয়ে দিতে চায় যে কেউ কোনও আইনের বিরােধিতা করলেই তাকে দেশদ্রোহী বা বিশ্বাসঘাতক বলা যায় না।’ আদালত আরও বলে, ‘আমাদের ভুললে চলবে না যে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেই এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আমরা ভাগ্যবান যে এই এখনও পর্যন্ত এই দেশের বেশিরভাগ মানুষ অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী।’
বম্বে হাইকোর্টের মতে এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এখনও এই দেশের মানুষকে তাদের নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করতে হয়। এই ক্ষেত্রে আদালত কার ন্যূনতম অধিকার হরণ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখবে।