• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

২০২৪ বাতিলের প্রয়োজন নেই, জানাল শীর্ষ আদালত 

এনটিএ পড়ুয়াদের পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছে, সুপ্রিম ভর্ৎসনা  দিল্লি, ২ আগস্ট-– ফের দেশের শীর্ষ আদালতে ভর্ৎসনার মুখে এনটিয়ে বা বলা ভালো ঘুরিয়ে মুখ পুড়ল কেন্দ্র সরকা। নিট-ইউজি ২০২৪ নিয়ে দেশ জুড়ে চলতে থাকা বিতর্কে এবার ইতি টানল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও মনোজ

এনটিএ পড়ুয়াদের পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছে, সুপ্রিম ভর্ৎসনা 
দিল্লি, ২ আগস্ট-– ফের দেশের শীর্ষ আদালতে ভর্ৎসনার মুখে এনটিয়ে বা বলা ভালো ঘুরিয়ে মুখ পুড়ল কেন্দ্র সরকা। নিট-ইউজি ২০২৪ নিয়ে দেশ জুড়ে চলতে থাকা বিতর্কে এবার ইতি টানল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা সামগ্রিকভাবে বাতিলের প্রয়োজন নেই। প্রশ্নফাঁস গোটা দেশজুড়ে হয়নি, কিছু আঞ্চলিক ভিত্তিতে হয়েছে। পরীক্ষার শুদ্ধতা নিয়ে কোনও বিধি লঙ্ঘন হয়নি। বিচারপতিরা কড়া ভাষায় এনটিয়েকে বলেন, নীট নিয়ে এনটিএ যেভাবে ছেলেখেলা করেছে, সেটা কোনওভাবেই পড়ুয়াদের স্বার্থরক্ষা হতে পারে না। এনটিএ-র উচিত টালবাহানা না করে সমস্ত ত্রুটি মিটিয়ে নেওয়া।
নিট ইউজিতে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে একাধিক মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সব মামলাগুলিকে একত্রিত করে একাধিক শুনানির পর শুক্রবার রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, বিহারের পটনা এবং ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ ব্যতীত কোথাও পরীক্ষা ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত ত্রুটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই যুক্তিতেই মামলাকারীদের একাংশ পুরো পরীক্ষা বাতিলের যে আর্জি জানিয়েছিলেন, তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
তবে পরীক্ষা বাতিল না করলেও গোটা ব্যবস্থাটিকে স্বচ্ছ রাখতে শুক্রবার একাধিক নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, যে কোনও ধরনের অনিয়মকে শনাক্ত করতে এনটিএ-কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে সরকার নিযুক্ত কমিটি। এর পাশাপাশি, প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে সেগুলি নিরাপদ জায়গায় রাখা— গোটা প্রক্রিয়াকে নিশ্ছিদ্র রাখতে ওই কমিটি এবং এনটিএ একটি নির্দিষ্ট বিধি তৈরি করবে।
এই রায়েই স্পষ্ট, পরিকল্পিতভাবে প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে মনে করে না শীর্ষ আদালত। তবে ডাক্তারি পড়ার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বিতর্ক নিয়ে রায়ে শুক্রবার নিয়ামক সংস্থা এনটিএ-কে ভর্ৎসনা করে। সর্বোচ্চ আদালত এদিনের রায়ে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি উভয়কেই ভবিষ্যতে আর যাতে নিট পরীক্ষা নিয়ে এমন অভিযোগ না ওঠে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করার বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বেঞ্চ বলেছে, প্রশ্নপত্র সংরক্ষণের স্ট্রংরুমের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা এবং গ্রেস মার্কস দেওয়া নিয়ে কোনও বাহানা দেখানো যাবে না।
এবারে যা ঘটেছে তা নিয়ে এনটিএকে দায় এড়ালে চলবে না। ভর্ৎসনার সুরে একথা জানিয়ে বেঞ্চ বলে, তারা ঠিকমতো কাজ করেনি এটা বোঝা গিয়েছে। স্ট্রংরুমের পিছনের দরজা খোলা থাকা কিংবা গ্রেস মার্কস দেওয়া, যার ফলে ৪৪ নম্বর বাড়তি পেয়ে ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ নম্বর পেয়ে যাওয়া সমস্ত বিষয় আছে। এনটিএ-র কমিটিকে এগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং এইসব ত্রুটি সংশোধন করা জরুরি, রায়ে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।
যদিও সুপ্রিম কোর্ট মনে করে, পরিকল্পিত বা ব্যবস্থাগত কোনও গোপনীয়তা ফাঁস হয়নি। হাজারিবাগ এবং পাটনা ছাড়া দেশের আর কোনও জায়গা থেকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত নয় বলে এবছরের গোটা প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবারই নিট ইউজি-র প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, চার্জশিটে মোট ১৩ জনের নাম রয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে মোট ছ’টি ধারায়। সিবিআই আগেই জানিয়েছিল, নিট-ইউজির পরীক্ষার দিন, অর্থাৎ ৫ মে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের ওয়েসিস স্কুল থেকে। ঘটনাচক্রে, হাজারিবাগের নিট পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি এই স্কুল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর থেকেই এই স্কুলের নাম উঠে এসেছিল। স্কুলে অধ্যক্ষ, সহ-অধ্যক্ষ এবং এক কর্মীকে আগেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট এনটিএকে  আট নির্দেশের যৌক্তিকতা বুঝিয়ে জানিয়েছে- 

* ⁠পটনা এবং হাজারিবাগ ছাড়া কোথাও পদ্ধতিগত জালিয়াতির কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। তাই পুনরায় পরীক্ষার আবেদন খারিজ করা হল। * এনটিএ-কে নিজের বারবার অবস্থান বদলানোর অভ্যাস বদলাতে হবে।  * ⁠যে যে খামতিগুলি উঠে এসেছে, সেগুলি সরকারকে ঠিক করতে হবে এবং আমাদের রিপোর্ট দিতে হবে। *  পরীক্ষার পদ্ধতিগত খামতি কি রয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখবে উচ্চ কমিটি। * ⁠পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। * নকল পরীক্ষার্থী কমানোর জন্য বিভিন্ন স্তরে ডিজিটাল ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা করতে হবে * ⁠পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে তা সংরক্ষণ এবং তার বন্টন পদ্ধতি সহজ করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করতে হবে। এবং তা কড়া ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তার উপরে নজর রাখতে হবে। * ⁠প্রয়োজনে অন্য দেশের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এ ধরনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁরা সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য কী কী করছে সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। * ⁠আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়ারাও যাতে সমান সুযোগ পায় সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।