পাটনা, ২৮ জানুয়ারি – ইস্তফা দিয়ে বিজেপির হাত ধরার কারণ হিসেবে ‘মহাগঠবন্ধন’ ও ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে দুষলেন নীতীশকুমার। নীতীশের সাফাই, কোনকিছুই ঠিকমতো চলছিল না। যদিও তাঁর এই পদক্ষেপকে তীব্র কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। দলের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের মতে, এমন কিছু মানুষ আছে যাঁদের বলা হয় আয়ারাম আর গয়ারাম।
গত দুইদিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল নাটকের প্রেক্ষাপট। শনিবার সারাদিন ধরে চলেছে তার চূড়ান্ত মহড়া। অবশেষে সব জল্পনা সত্যি করে রবিবার মহাগঠবন্ধনের সরকার ভেঙে দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশকুমার। রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এনডিএ জোটের সমর্থন নিয়ে ফের সরকার গড়ার দাবিও জানান। রাজ্যপালের সম্মতি মেলায় রবিবারই ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
দেড় বছরও পূরণ হয়নি মহাগঠবন্ধনে ছিলেন নীতীশ কুমার। সেই মহাজোট বা বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট কোথাও তাঁর মনমতো কাজ হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন জেডিইউ সভাপতি। এছাড়া ইন্ডিয়া ব্লক তৈরিতে তিনি এতটাই সচেষ্ট ছিলেন যে সেখানেও তাঁর পরামর্শ ও প্রচেষ্টা যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি বলে জানিয়েছেন নীতীশ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘ আপনারা জানেন, আমি কিভাবে এই জোটে এসেছেই , কিভাবে আমি এতগুলি দলকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ইদানিং সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল না। এর প্রভাব আমার দলের উপরেও পড়ে। ‘
জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী নীতীশের এই সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব চুরি করতে চেয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন , ‘ইন্ডিয়া জোটে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনার অভাব ছিল।’
যদিও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ প্রত্যাশিতই ছিল বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। দলের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘বিহারের ডেপুটি সিএম এবং লালু প্রসাদ যাদব এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং আজ তা সত্যি হয়েছে। এই দেশে এমন অনেক লোক আছে, যাঁরা আয়ারাম গয়ারাম।’
খাড়গে বলেন, আরজেডি নেতৃত্ব আরও বলেছিল যে তারা এখনও জেডিইউ যাতে জোটে থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। তিনি বলেন, ‘ আমরা এ বিষয়ে অবহিত ছিলাম। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট অটুট রাখার জন্য আমরা এই বিষয়ে কথা বলিনি। কারণ আমরা ভেবেছিলাম, আমরা ভুল বললে ভুল বার্তা যেতে পারে।’
এদিকে ইন্ডিয়া ব্লক ছেড়ে নীতীশের এনডিএ-তে যোগদান এবং জেডিইউ-বিজেপি জোট সম্পর্কে কটাক্ষ করেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তাঁর দাবি, বিহারে আগামী বিধানসভা পর্যন্ত নীতীশ-বিজেপি জোট স্থায়ী হবে না। তাঁর দাবি, ‘ লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে এটা শেষ হয়ে যাবে। আমি এ কথা লিখে দিতে পারি। নীতীশ আবার বিজেপির হাত ধরেছেন, এর একমাত্র কারণ, তিনি বুঝতে পারছিলেন, মহাগঠবন্ধন-এ থেকে লোকসভা ভোট একটি আসনেও জিততে পারবেন না। তাই এনডিএ-তে ঢুকে মোদি , বিজেপির বদান্যতায় যদি কিছু আসন জেতা যায় তার জন্য এই সিদ্ধান্ত । তা হয়তো হবেও। কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি, ২০২৫ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে এই নতুন জোটের মূল্য দিতে হবে বিজেপিকে। ‘