দিল্লি, ২৩ জুলাই – বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রথম বাজেটে শরিকি বাধ্যতার প্রমাণ মিলল হাতেনাতে। এক কথায় বলা যায়, মোদির নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ বাজেট ‘। এনডিএ-র দুই মূল শরিক দলকে সন্তুষ্ট করার এই বাজেটে নির্মলা সীতারমণ কার্যত দুহাত উপুড় করে দিয়েছেন বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশকে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটের বেশিরভাগ প্রকল্প ও আর্থিক বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে বিহারের জন্য। দরাজ হাতে দান করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশকেও। বিহার এবং অন্ধ্রের জন্য রাস্তাঘাট , নতুন বিমানবন্দর, মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ক্ষেত্রে আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা হল এ বারের বাজেটে। অথচ বাংলা-সহ অন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যের ঝুলি কার্যত শূন্য।
লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার এখন শরিকনির্ভর। শরিকি বাধ্যতার চাপেই চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করল কেন্দ্র। মূল দাবিই ছিল অন্ধ্র এবং বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ। সেকারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও বিশেষ দাবিদাওয়া জানাননি শরিকরা। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের মূল দাবিই ছিল আর্থিক প্যাকেজ। সেটা একপ্রকার বাধ্য হয়েই মানতে হল নির্মলাকে । অন্যদিকে বাংলার সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের ‘বিবাদ’ সর্বজনবিদিত । তাই বাংলার জন্য বাড়তি বরাদ্দের কোনও বাধ্যবাধকতাও ছিল না কেন্দ্রের।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, অন্ধ্রের নতুন রাজধানী অমরাবতীর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাড়তি ১৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, আগামী বছরগুলিতে এই ধরনের আরও একাধিক আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা। অন্ধ্রপ্রদেশের দুটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি অন্ধ্রের বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জগন্মোহনের দলকে হারিয়ে জয়ী হয় চন্দ্রবাবুর দল। ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ফেরেন চন্দ্রবাবু নাইডু । ফিরেই অমরাবতীকে রাজ্যের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু এই শহরের পরিকাঠামো তেমন উন্নত নয়। তাই বাজেটে চন্দ্রবাবুর সেই স্বপ্নকে পূরণ করার পথ করে দিল কেন্দ্র। রাজধানী অমরাবতী গড়ে তোলা ও অন্যান্য পরিকাঠামোর জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে।
বিহারের ক্ষেত্রে নির্মলা আরও উদারহস্ত। বিহারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে মোট ২৬ হাজার কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির করিডোর তৈরি হবে কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের ধাঁচে। বুদ্ধগয়ার উন্নয়নে বাড়তি বরাদ্দ করা হবে। নালন্দাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার জন্য প্যাকেজ দেবে মোদি সরকার।
দীর্ঘ দিন ধরেই বিহারের অনগ্রসরতার কথা তুলে ধরে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে জেডিইউ। কিন্তু সেই দাবি মেনে বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়, তা সোমবারই স্পষ্ট করে মোদি সরকার। তা নিয়ে বিরোধীরা তো বটেই, জেডিইউয়ের মধ্যেও বিতর্ক তৈরী হয়। কিন্তু মঙ্গলবার বাজেটে মোদি সরকার নিরাশ করেনি নীতীশের বিহারকে। বাংলার পড়শি রাজ্যের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে।
বিহারের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে এ বারের বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিহারের বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পাটনা-পূর্ণিয়া, বক্সার-ভাগলপুরের ভিতর এক্সপ্রেসওয়ে উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়াও বুদ্ধগয়া, রাজগির, বৈশালী এবং দ্বারভাঙাতে এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই খাতে মোট ২৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
এ ছাড়াও বিহারে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে বাজেটে। বক্সার জেলায় গঙ্গার উপর দুই লেন বিশিষ্ট সেতু তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ভাগলপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘উন্নয়নের জন্য বেশি ঋণ নিতে পারবে বিহার সরকার।’’
বিহারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্যও বিশেষ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। ভারতকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রের শীর্ষে তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করে সাজানো হবে বুদ্ধগয়া, রাজগির এবং নালন্দা। এ ছাড়াও, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহয়তার কথা বলা হয়েছে এই বাজেটে। পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি জন্য নতুন পূর্বদয় প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন নির্মলা সীতারামন। সেই উদ্যোগের অন্যতম অংশও বিহার।