নতুন আইন ব্যবস্থায় গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড, প্রথম এফআইআর দায়ের হয় দিল্লির এক হকারের বিরুদ্ধে

দিল্লি, ১জুলাই  – সোমবার থেকে দেশ জুড়ে কার্যকর হল অপরাধ সংক্রান্ত নতুন আইন। ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ -এর বদলে  কার্যকর হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। এই ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ অনুসারে এবার বিচার হবে।  সোমবার আইন কার্যকর হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অমিত শাহ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর নতুন ক্রিমিনাল ল কার্যকর হল।’ বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে স্বদেশী হল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। সোমবার তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু সেকশন বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে। তাঁর কথায় ‘এই আইন শাস্তির বদলে মানুষকে ন্যায়বিচার দেবে ’। নতুন আইনে কী কী সুবিধা আছে, তা বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন , মহিলাদের হেনস্থার ঘটনায় তাঁদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। এছাড়া সমাজের ভয়ে যদি কেউ  থানায় যেতে ভয় পান, তাহলে তাঁরা বাড়ি থেকেই অনলাইনে এফআইআর করতে পারবেন।
 
এদিকে নতুন ফৌজদারি আইনের আওতায় প্রথম এফআইআর দায়ের হয় দিল্লির এক হকারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে অভিযুক্ত হকারের নাম পঙ্কজ কুমার। তিনি বিহারের পটনার বাসিন্দা। নয়াদিল্লি রেল স্টেশনের কাছে একটি রাস্তা ঘিরে ব্যবসা চালানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে নতুন ফৌজদারি আইনের ২৮৫ ধারার অধীনে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে বলে খবর। ২৮৫ ধারা অনুসারে,  কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর দখলে থাকা সম্পত্তির মাধ্যমে অন্যের যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করেন অথবা অন্য কোনও ব্যক্তির বিপদ, বাধা বা আঘাতের কারণ হন, তবে শাস্তি হিসেবে  তাঁকে জরিমানা দিতে হবে, যা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সেই ধারাতেই এফআইআর দায়ের হল দিল্লির ওই হকারের বিরুদ্ধে।
 
রবিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের কাছে কমলা মার্কেট থানার একটি রাস্তায় ওই হকারকে জলের বোতল এবং গুটখা বিক্রি করতে দেখে দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ, নয়াদিল্লি রেলস্টেশনের ফুটব্রিজের সামনের জায়গা দখল করে বিক্রিবাটা করছিলেন তিনি । অস্থায়ী দোকানটি মানুষের যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করায় দোকানদারকে সেটি সরিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু দোকানদার রাজি না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। 
 
দেশে যে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন চালু হয়েছে সেই নিয়ে  সোমবার  সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিনের বৈঠকে গণপ্রহারের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন অমিত শাহ। একই সঙ্গে নতুন আইনে কী কী বিধান রয়েছে তা-ও স্পষ্ট করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, বিরোধীদের উদ্দেশে শাহের বার্তা, ‘‘নতুন আইন নিয়ে রাজনীতি না করে দেশের মানুষের স্বার্থে সমর্থন করুন।’’  একইসঙ্গে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও নতুন ধারা আনা হয়েছে। সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে গণপ্রহার নিয়ে এত দিন আলাদা কোনও উল্লেখ ছিল না। তবে সোমবার থেকে দেশ জুড়ে চালু হওয়া নয়া ভারতীয় ন্যায় সংহতিতে এই গণপ্রহারের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা হতে পারে।
 
আগের আইনে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে, তার জন্য বিশেষ ধারা ছিল, এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করে এমন মন্তব্যে পদক্ষেপ করা হবে। সাধারণ মানুষ এক আধুনিক বিচার প্রক্রিয়ার সুবিধা পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ। আইনে প্রযুক্তির ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই তিনি জানান,যে কোনও তল্লাশি বা বাজেয়াপ্ত করার ঘটনায় ভিডিয়োগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার মামলায় নির্যাতিতার ই-স্টেটমেন্ট এবার থেকে আইনত গ্রাহ্য হবে।
 
প্রসঙ্গত,  দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৭৭ বছর কেটে গেছে। এবার পুরোপুরি স্বদেশি হল বিচার ব্যবস্থা। ব্রিটিশকাল থেকে চলে আসা ভারতীয় আইনে বদল এনেছে  মোদি সরকার। শাহ বলেন, দণ্ড নয় বরং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবে নয়া আইন। এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে বিচার ব্যবস্থা আরও দ্রুত হবে।