মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বাবা সিদ্দিকী। এনসিপি-র এই নেতাকে হত্যার দায় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লরেন্স বিষ্ণই গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে এই দাবি সত্য কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, বাবা সিদ্দিকী ছাড়াও দুষ্কৃতীদের নিশানায় ছিল তাঁর ছেলে জিশানও। যে তিন যুবকের বিরুদ্ধে বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। ধৃতেরা হল গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ। ধৃত এই দুই যুবককে ইতিমধ্যেই আদালতে পেশ করা হয়েছে। আদালত দুই অভিযুক্তকে আগামী ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন মঞ্জুর করেছে।
এই ঘটনায় আরও এক দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সূত্রের খবর, শিবকুমার গৌতম নামে ওই যুবক ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা। প্রাথমিক জেরায় গুরমেল এবং ধর্মরাজ পুলিশকে জানিয়েছে, বাবা সিদ্দিকীকে কে বা কারা খুনের পরিকল্পনা করেছে, তা তাঁদের অজানা। কারণ, যারা তাদের এই ‘কাজের বরাত’ দিয়েছিল, তারা শুধুমাত্র শিবকুমারের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখত।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনা ঘটার কয়েক আগে থেকেই হুমকি দেওয়া হয়ে আসছিল সিদ্দিকী পরিবারকে। খুনের হুমকি আসে বাবা সিদ্দিকীর ছেলে জিশানের কাছেও পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার অভিযুক্তেরা জেরার মুখে জানিয়েছেন, বাবা এবং ছেলে দুই জনকেই খুনের নির্দেশ ছিল। সামনে যাঁকে পাওয়া যাবে ,তাঁকেই গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শনিবার রাতে বাবা সিদ্দিকীকে সামনে পেয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা।
এনসিপি নেতা খুনের ঘটনায় গুরমেল সিংহ এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ ছাড়াও এক চক্রীকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। রবিবারই তাঁদের মুম্বইয়ের এসপ্ল্যানেড আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্ত এক জনের বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে তাঁর বয়স নির্ধারণ সংক্রান্ত শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে।
এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির খুনের ঘটনায় রবিবার এক ব্যক্তিকে পুণে থেকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত তৃতীয় ব্যক্তির নাম প্রবীণ লোঙ্কার। পুলিশের দাবি, যারা বাবা সিদ্দিকিকে খুনের চক্রান্ত করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম হল এই প্রবীণ। সেই হিসাবে তাকে এই ঘটনার অন্যতম চক্রী বলা যায়। প্রবীণ এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাবা সিদ্দিকীকে খুন করার চক্রান্ত করেছিল বলে অভিযোগ। তারাই বাবা সিদ্দিকীকে হত্যা করতে তিন দুষ্কৃতীকে নিয়োগ করেছিল। ধৃত তৃতীয় ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে লরেন্স বিষ্ণই গ্যাংয়ের হয়ে পোস্ট করা যুবকের ভাই।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছিল, গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপই বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনায় বদল আনা হয়। কারণ, বাবা সিদ্দিকীকে ঘিরে বহু মানুষের জমায়েত হয়েছিল। সেই জমায়েতে পুলিশের সংখ্যাও ছিল অনেক। তাই শেষ মুহূর্তে ঠিক করা হয়, গুরমেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ নয়, বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করবে শিবকুমার গৌতম। আর বাকি ২ জন তাকে সাহায্য করবে পালাতে। প্রয়োজনে পালানোর সুবিধা করে দিতে বাকি ২ দুষ্কৃতিকেও শূন্যে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাবা সিদ্দিকীকে লক্ষ্য করে মোট ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। তার মধ্যে দু’টি গুলি বাবা সিদ্দিকির শরীরে লাগে। ঘটনার পর তাঁকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা জানান, বাবা সিদ্দিকীর বুকে দু’টি গুলি লেগেছিল।
বাবা সিদ্দিকিকে খুনের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাবা সিদ্দিকিকে খুব কাছ থেকে, আনুমানিক ৩ ফুট দূরত্ব থেকে গুলি করা হয়। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী। অভিযোগ, যখন গুলি করা হয়, তখন বাবা সিদ্দিকীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী তাঁকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও আর একটি ‘অস্ত্র’ এনেছিল, সেটি হল পেপার স্প্রে। বাবা সিদ্দিকী কে গুলি করার আগেই তাঁর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর চোখে ওই পেপার স্প্রে দিয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, ক্রাইম দত্তা নালাওয়াড়ে জানিয়েছেন, তিনবারের বিধায়ক তথা এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকী র নিরাপত্তার জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা ছিল না। বাবা সিদ্দিকীও নিজে কখনও অতিরিক্ত নিরাপত্তা চাননি বা তাঁর প্রাণ সংশয় রয়েছে বলে অভিযোগ করেননি।
প্রসঙ্গত, বাবা সিদ্দিকী শুধুমাত্র রাজনীতিক হিসেবেই নয়, বলিউডের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল. সলমন খান, শাহরুখ খান, সঞ্জয় দত্তের মতো নেতাদের সঙ্গে সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানা যায়। চলতি বছরে ১৪ এপ্রিল সলমন খানের বাড়ির সামনে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বিষ্ণই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।