সুনীতা দাস
১৯৭১, এমন একটা সময় যে বছর বাংলাদেশের কাছে আজ আতঙ্কের, না ভোলার৷ যখন পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার চলছে বাংলাদেশের উপর৷ গ্রামের পর গ্রাম আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে৷ সেই সময় জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ৷ সেই বছর একই চিত্র দেখা যায় ভারতের বাংলাদেশেও৷ ভাবছেন, কি সব বলছি ? ভারতে আবার বাংলাদেশ কথা থেকে আসবে ? অবাক হলেও এটা বাস্তব৷ আমাদের ভারতেই কাশ্মীরের কোলে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম এই বাংলাদেশ৷ যদি ১৯৭১-এরপর কাশ্মীরে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় এই বাংলাদেশ ৷কাশ্মীরের বান্ডিপুরা জেলায় অবস্থিত এই বাংলাদেশ গ্রাম৷ পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই পাহাড়ি গ্রাম৷ প্রথম দিকে এই গ্রামে ৫-৬টি বসত বাড়ি ছিল৷ সেটাই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি৷ প্রায় ৩০০ লোকের বাস এই বাংলাদেশে৷ এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবাণু চাষবাস ও পশুপালন৷ ১৯৭১ সালে গ্রাম তৈরি হলেও দীর্ঘদিন সরকারি খাতে এই জায়গার কোনও অস্তিত্ব ছিল না৷ ২০১০ সালে বান্ডিপুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের থেকে এই গ্রামকে মর্যাদা দেওয়া হয়৷
উলার হ্রদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গোটা গ্রাম৷ মূলত এই হ্রদের টানেই পর্যটকদের ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়৷ কার্পেটের মতো সাজানো সবুজ বুগিয়াল, আর হ্রদের জল যেন কাশ্মীরের বাংলাদেশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে৷ আর তার সঙ্গে দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে উঁচু উঁচু পর্বত৷ তার চূড়া ঢাকা সাদা বরফের চাদরে৷ যেখানে উপত্যকা বলা হয়, ভূস্বর্গ, সেখানকার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনমুগ্ধকর৷
১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানের সেনারা বাংলাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় কাশ্মীরের জুরিমন গ্রামে হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়৷ তারপর বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ জুরিমন গ্রাম থেকে একটু দূরে গিয়ে তাঁরা আবার বসবাস শুরু করেন৷ একসঙ্গে গড়ে তোলেন ঘর৷ আর যেহেতু ১৯৭১ সালে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে ওঠে, তাই নাম মিলিয়ে কাশ্মীরের এই গ্রামের নামও রাখা হয় ‘বাংলাদেশ’৷
গ্রামের ইতিহাস যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম৷ বর্তমানে এই বাংলাদেশ গ্রাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে৷ জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে এই বাংলাদেশ৷ গুলমার্গ, সোনমার্গ, পহেলগাঁওয়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এই বাংলাদেশও৷ পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে এই গ্রামে৷ শ্রীনগর থেকে বান্ডিপুরার দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার৷ বান্ডিপুরা থেকে সোপুরের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশে