দিল্লি, ২১ জুন-– ফের পরীক্ষায় বসতেই হচ্ছে নিট-ইউজি ২০২৪ সালের নিট-ইউজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে অভিযুক্ত ১৫৬৩ জনকে৷ এবার সুপ্রিম কোর্টের কোপে তারা৷ নিট-ইউজি ২০২৪ পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় কাউন্সেলিং বন্ধ ও নিয়ামক সংস্থা কর্তৃক ১৫৬৩ জন প্রার্থীর ফের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাবে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আবেদন নাকচ করল সুপ্রিম কোর্ট৷ শুক্রবার এই সংক্রান্ত আরও আবেদনকে আবার এক জায়গায় এনে ৮ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত৷ উল্লেখ্য, নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির আসন বিলির কাউন্সেলিং পর্ব শুরু হবে নির্ধারিত ৬ জুলাইয়েই৷
বিচারপতি বিক্রম নাথ ও এসভি ভাট্টির অবসরকালীন বেঞ্চ স্থগিতাদেশের আবেদন নাকচ দিয়ে বলে, যদি এই মামলায় আপনাদের জয় হয়, তাহলে হতে পারে পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাটিই বাতিল করা হবে৷ এমন সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতেই হবে৷
অন্যদিকে এদিনই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে৷ ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার প্রবেশিকা পরীক্ষা নেট বাতিল করে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে দেশ জুডে়৷ বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ৷ বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরাও৷ সেই আবহেই সেখানে যান ধমেন্দ্র আর এরপর তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়৷ তার পর অনুষ্ঠান বাতিল করে বেরিয়ে যান ধর্মেন্দ্র৷ কিন্তু বেরিয়েও রেহাই পাননি তিনি৷ এদিন তাঁর নয়াদিল্লির বাসভবনের সামনেও শুক্রবার সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে যুব কংগ্রেস৷
উল্লেখ্য, নিট এবং নেট নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ধর্মেন্দ্র৷ সেখানে এই পরিস্থিতির জন্য নিজেই দায় স্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, সরকারের অগ্রাধিকার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ৷ তার সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা হবে না৷ যে বা যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, নিট এবং নেট পরীক্ষার আয়োজন সংস্থা এনটিএ-র (জাতীয় টেস্টিং এজেন্সি) কাঠামোগত এবং প্রক্রিয়াগত সংশোধন করা হবে৷ তার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এনটিএ-র শোধন করা হবে৷ নেট বাতিলকে ‘প্রতিষ্ঠানগত ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী৷
শিক্ষামন্ত্রীর নিজের দায় স্বীকার করাতেও যে কোন লাভ হয়নি তারই প্রমাণ শুক্রবারও চলতে থাকা প্রতিবাদ কর্মসূচি৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ শুক্রবার বিশ্ব যোগ দিবস উপলক্ষে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল ধর্মেন্দ্রের৷ সকালেই তিনি সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ তাঁর উপস্থিতিতেই পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখান৷ অভিযোগ, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানো হয়৷ নিট এবং নেটে দুর্নীতি নিয়ে স্লোগানও দেওয়া হয়৷ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন তিনি৷
শিক্ষামন্ত্রীর বাডি়র সামনে বিক্ষোভরত যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাস বিভি বলেন, ‘‘ধর্মেন্দ্র প্রধানের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা উচিত৷ এই দেশে দুর্নীতি ছাড়া কোনও পরীক্ষাই হয় না৷ সমাজমাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন৷’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দেশ জুডে় ইউজিসি নেট পরীক্ষা হয়৷ কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী তাতে অংশ নিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত বুধবার রাতে সরকার জানিয়ে দেয়, পরীক্ষাটি বাতিল করা হচ্ছে৷ পরীক্ষার স্বচ্ছতা সংক্রান্ত গোলমাল ধরা পড়ায় এই সিদ্ধান্ত৷ দেশ জুডে় সরকারের এই সিদ্ধান্তে আলোড়ন পডে় গিয়েছে৷ বিরক্ত ছাত্রছাত্রীরাও৷ পরবর্তী পরীক্ষার দিন জানানো হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷ একই ভাবে নিটের ফলপ্রকাশের পর তাতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ ৬৭ জন ওই পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে একই পরীক্ষাকেন্দ্রের৷ বিহারে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে৷
আর এরপরই শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরবর্তী পরীক্ষার দিন ৬ জুলাই থাকবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়৷