এক দশক পর জম্মু-কাশ্মীরে হওয়া নির্বাচনে জয়ী হল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস জোট। জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম থেকেই এগিয়েছিল এনসি এবং কংগ্রেস জোট। ম্যাজিক ফিগারের গণ্ডি পেরিয়ে যায় মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই।২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর এই প্রথম নির্বাচন হয়েছে উপত্যকায়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই ছিল প্রধানত চতুর্মুখী।বিজেপি ছাড়া পিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের তৈরী একাধিক আঞ্চলিক দল। এনসি-কংগ্রেস জোটের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই এনসি-র তরফে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন ফারুকপুত্র ওমর আবদুল্লা।
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের ফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হল। সেখানে ভোটের ফলাফল এগোতেই ঝড় তুলে দেয় ন্যাশনাল কনফারেন্স। তারা জয়ী হয়েছে ৪২টি আসনে। এনসি-র সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসন।জম্মু-কাশ্মীরে মুখ থুবড়ে পড়ে গেরুয়া শিবির।জম্মু কাশ্মীরে বিজেপি জয়ী হয়েছে ২৯টি আসনে। জম্মু-কাশ্মীর বিজেপির সভাপতি রবিন্দর রায়না নিজে হেরেছেন নৌশেরা আসন থেকে। সিপিএম একটি আসনে জয়ী হয়েছে। সিপিএমের তারিগামী জিতেছেন কুলগাম আসনে। এই প্রথম উপত্যকায় খাতা খুলল আপ। মেহবুবা মুফতির পিডিপি মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স জয়ী হয়েছে একটি আসনে। নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৭টি আসনে ।
জয় নিশ্চিত হতেই জম্মু ও কাশ্মীরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা হবেন বলে ঘোষণা করেন ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রধান ফারুক আবদুল্লা।
৯০ আসন বিশিষ্ট জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় সরকার গঠনের ম্যাজিক ফিগার ছিল ৪৬। জম্মু হিন্দু অধ্যুষিত এবং কাশ্মীর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ফের ক্ষমতার আসনে ওমর আবদুল্লা।
দুই রাজ্যের বিধানসভা ভোটেই রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরে কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ।কংগ্রেস জম্মুতে মাত্র একটি আসনে জিতেছে। এই প্রথম ডোডায় জিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি জম্মু-কাশ্মীরে খাতা খুলেছে। ডোডা বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন আপের প্রার্থী মেহরাজ মালিক। তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপি প্রার্থী গজয় সিংহ রানাকে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন।
উপত্যকায় মোট ৩২টি আসনে প্রার্থী দিলেও কংগ্রেসের জয় এসেছে মাত্র ৬টি আসনে। বন্দিপোরা, অনন্তনাগ, রাজৌরি কেন্দ্রে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে জম্মুতে বিজেপি ভালো ফল করেছে। বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের দাবি, জম্মু এলাকায় জেতা আসনগুলিতে বিজেপি একাই ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। জম্মুতে জেতা ২৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট।
কাশ্মীরে এবার আশানুরূপ ফল করতে পারেনি পিডিপি। পরাজয়কে স্বীকার করে নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘কাশ্মীরের মানুষ আস্থা রেখেছেন এনসি এবং কংগ্রেস জোটে। উপত্যকাকে স্থায়ী সরকার দিতে পারবে এই জোট এটাই মানুষের বিশ্বাস। ওরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইও চালিয়ে যেতে পারবে। এটাই ওদের জয়ের বড় কারণ। এই ফলাফল থেকে কেন্দ্রের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেছিল মেহবুবা মুফতির পিডিপি। নির্বাচনে জিতে সরকারও গঠন করেছিল দল। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে একলা লড়ে হার হয় পিডিপির। শ্রীগুফওয়ারা-বিজবেহারা আসনে নিজের মেয়ে ইলতিজা মুফতিকে প্রার্থী করেন মেহবুবা। পরাজিত হয়েছেন ইলতিজাও। এক্স হ্যান্ডেলে নিজের পরাজয় স্বীকারও করে নেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে, উপত্যকায় ফের নতুন করে আবদুল্লা সরকার গঠন হওয়ার মুখে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আবদুল্লা বলেন, যারা গত পাঁচ বছর ধরে ন্যাশনাল কনফারেন্সকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, আজ তারাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ওমর আবদুল্লা আবার বসতে চলেছেন পুরনো পদে।
নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা আবদুল্লা পরিবার নিয়ে নানা প্রশ্ন তুললেও ওমর একনিষ্ঠভাবে প্রচারের বাইরে থেকে কাজ করে গিয়েছেন। আর তারই ফল মিলেছে বিধানসভা ভোটে। বেলা গড়াতেই মালুম হয় ওমরের জয় নিশ্চিত।গান্ডেরবাল এবং বদগাম, কাশ্মীরের এই দুই আসনেই জয়ী হন এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা। বিকেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ফারুক আবদুল্লা জানিয়ে দেন জম্মু ও কাশ্মীরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন পুত্র ওমর আবদুল্লা। এরপরই শ্রীনগরে ফারুক আবদুল্লার বাড়ির সামনে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন এনসি এবং কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
জয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘আমরা আবার কাশ্মীরের মানুষেরসেবা করার সুযোগ পেয়েছি। গত পাঁচ বছরে এনসিকে নানাভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বরের আশীর্বাদে যাঁরা আমাদের শেষ দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরাই শেষ হয়ে গিয়েছেন।’