কাশ্মীর উপত্যকায় ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর রাজ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিরপত্তা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ।
বৃহস্পতিবার কাশ্মীর উপত্যকায় এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে জঙ্গি বিরােধী অভিযান আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। দোভাল উপত্যকার বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের সময় সাধারণ মানুষ যাতে নির্ভয়ে তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা নির্বাহ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৫ আগস্ট জম্মু এবং কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলােপকারী ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দ্বিতীয়বারের জন্য উপত্যকার সামগ্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য উপস্থিত হন। উল্লেখ্য ৩১ অক্টোবর জম্মু এবং কাশ্মীর এবং লাদাখের জন্য গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পরই জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের পরিবর্তিত মর্যাদা লাভের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।
এদিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উপত্যকার জঙ্গি আক্রমণের লক্ষ্য সম্ভাব্য স্থানগুলির নিরাপত্তা নিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে জঙ্গি আক্রমণ মােকাবিলার সময়ে যাতে সাধারণ নাগরিকদের কোনও ক্ষতি না হয় সেবিষয়ে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। কারণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জঙ্গি গােষ্ঠী সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং আপেল চাষিদের কারফিউ বলবতের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য প্ররােচনা দিচ্ছে বলে গােয়েন্দা বিভাগের কাছে খবর রয়েছে।
এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর এগারাে দিন লাগাতার সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। চলতি সময়ে দোভাল একই সঙ্গে স্থানীয় ও সীমাসুরক্ষা বাহিনীর কাজেরও তদারকি করবেন। বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ফের জম্মু ও কাশ্মীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলােপের পরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সেখানে পা রাখলেন তিনি। এ বারের সফর ঠিক কতদিনের, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
সূত্রের খবর, জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন ও বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন দোভাল। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছিলেন উপত্যকার প্রশাসনিক পরিকাঠামাে নতুন করে গড়ে তুলতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালই সবটা দেখবেন। তারপর থেকে দেখা গিয়েছে কখনও তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে কখনও বিএসএফ বা সিআরপিএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কখনও আবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। উদ্দেশ্য একটাই, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে উপত্যকার মানুষের আস্থা ফেরানাে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আগেই জানিয়েছিলেন, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে কাশ্মীরে আনার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। রেডিও তরঙ্গ ট্র্যাক করে দেখা গিয়েছে পাক সেনার টাওয়ার ব্যবহার করে মােবাইলে কথা বলছে জঙ্গিরা। ওপার থেকে সাংকেতিক ভাষার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতও বলছেন, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢােকার চেষ্টা করছে প্রায় ৫০০ জঙ্গি। বালাকোটে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জইশ শিবির। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় নজরদারি অনেক গুণ বাড়িয়ে তােলা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দোভালের ফের কাশ্মীর সফরের পিছনে অন্য কারণও রয়েছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লােপকে বিজেপির সমর্থকরা ছাড়া আর কেউই মেনে নিতে পারেননি। একই দাবি তুলেছেন আটক থাকা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়েও। যদিও এইসব দাবি পুরােপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। তিনি বলেছেন, উপত্যাকায় ফের নাশকতা তৈরি করতে তৎপর জঙ্গিরা। এই সন্ত্রাসবাদকে যাঁরা সমর্থন করেন, তারাই এমন অভিযােগ এনে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।