রাজ্যসভায় ৪ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে মাস্টারস্ট্রোক মমতার, প্রার্থী মতুয়া অনুঘটক মমতাবালাও

কলকাতা, ১১ ফেব্রুয়ারি: সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভার ভোট। সেই ভোটকে কেন্দ্র করে মাস্টারস্ট্রোক দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা করলেন চারজন প্রার্থীর নাম। যাদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওই চারজন প্রার্থী হলেন সুস্মিতা দেব, সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ, সাংবাদিক নাদিমুল হক ও বনগাঁর প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থীরা সোমবার থেকেই মনোনয়ন জমা দিতে পারেন বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর।

এবারের তালিকায় স্থান পাননি রাজ্যসভার পুরনো তিন জন সাংসদ। সেই তিনজন হলেন শুভাশিস চক্রবর্তী, আবীররঞ্জন বিশ্বাস এবং শান্তনু সেন। শুধুমাত্র নাদিমুল হককেই ফের প্রার্থী করা হচ্ছে। এই নিয়ে নাদিমুল তিনবার রাজ্যসভার সদস্য হবেন। তবে এই চারজন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে চর্চিত নাম মমতাবালা ঠাকুরকে নিয়ে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মতুয়া ভোট টানতেই মমতাবালাকে ফের সাংসদ পদে ফেরাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেশ কয়েক বছর হল ঠাকুরবাড়ির ‘বড়মা’ বীণাপানি দেবী প্রয়াত। তারপর থেকেই ঠাকুর পরিবার এখন সরাসরি দুই ভাগে বিভক্ত। বীণাপাণি ঠাকুরের ছোট নাতি শান্তনু ঠাকুর বর্তমানে বনগাঁ লোকসভার সাংসদ। তিনি আবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মন্ত্রীসভায় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী। বড় নাতি সুব্রত ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক। তিনি গাইঘাটা থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে মমতাবালার পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। বীণাপানি দেবী প্রয়াত হওয়ার পর সেই দ্বন্দ্ব মেটাবার মতো এখন আর কেউ নেই। সেজন্য নাতিরা এখন লাগামছাড়া। দুই নাতি জনপ্রতিনিধি হলেও তাঁদের জনপ্রিয়তা তলানিতে। গেরুয়া দলের মধ্যেই তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে। দলের নেতা কর্মীদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই ভাই ক্ষমতায় এলেও নিজেদের কয়েকজন অনুগত ছাড়া দলের সিংহভাগ কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই। সময়ে অসময়ে দলের কর্মীরা ঠাকুর পরিবারের এই দুই জনপ্রতিনিধিকে পাশে পায়নি বলে বিজেপির দলীয় সূত্রের খবর।


গাইঘাটার পাঁচপোতা সহ বিভিন্ন প্রান্তে এই ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গোটা স্বরূপনগর জুড়ে। এছাড়া বনগাঁ উত্তর ও বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা বিধানসভাতেও ক্ষোভের আগুন আছড়ে পড়ছে। সূত্রের খবর, বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন। একসময় দলে ও ব্যক্তিগতভাবে শান্তনু ঠাকুরের যিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, তিনি সাংসদকে এড়িয়ে চলছেন। বনগাঁ লোকসভার বিভিন্ন প্রান্তে সিংহভাগ মতুয়ারাও বীণাপানি দেবীর এই দুই নাতির ওপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। এমতাবস্থায় মতুয়া ভোট ফেরাতে প্রাক্তন সাংসদকেই তুরুপের তাস করলেন মমতা। বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে তাই ঠাকুর পরিবারের প্রাক্তন সাংসদকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভা ভোটের আগে নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) চালুর ঘোষণা করেছেন। যা মতুয়া সম্প্রদায়ের দীর্ঘ দিনের দাবি। তবে মমতাবালা সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় গেলে মতুয়াদের বিজেপির প্রতি আনুগত্যে ভাটা পড়বে। তিনি মতুয়া ভোট টানতে অনুঘটকের কাজ করবেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।

সুস্মিতা দেব আগে তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। তাঁকে মানস ভুঁইয়ার ছেড়ে দেওয়া রাজ্যসভার আসনে প্রার্থী করা হয়েছিল। দেড় বছর সেই পদে ছিলেন। সংসদের উচ্চকক্ষে ভাল কাজও করেছিলেন সুস্মিতা। মেয়াদ শেষ হলেও ফের এক বছরের ব্যবধানে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছেন মমতা।

বাকি দুইজনই সংবাদ জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে অতি পরিচিত নাম সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ। তিনি আবার সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইয়ের স্ত্রী। জাতীয় সংবাদমাধ্যমের এমন একজন সাংবাদিককে রাজ্যসভায় প্রার্থী করে চমক দিলেন তৃণমূল নেত্রী। তৃতীয় বার রাজ্যসভায় যাওয়া নাদিমুলও সংবাদ জগতের একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি একটি উর্দু দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদক। যেটি কলকাতা থেকেই প্রকাশিত হয়। ফলে এই চারজন প্রার্থী বাছাইয়ে ফের মমতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রতিফলিত হয়েছে।