অফিসে কাজের ভয়ঙ্কর চাপ। বিশ্রাম নেওয়ার কোনও সময় ছিল না। এমনকি বাড়ি ফিরে পোশাক বদলানোরও সময় থাকতোনা। ছুটিও মিলত না। এই অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তরুণীর মা । ২৬ বছর বয়সী পুনের বাসিন্দা অ্যানা সেবাস্টিয়ান পেরাইলের মৃত্যু এবং তাঁর মায়ের অভিযোগ ঘিরে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। পুনের আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং কনসালট্যান্ট ফার্মে মাস চারেক আগে কাজে যোগ দেন কেরালার বাসিন্দা অ্যানা। মা অনিতা অগাস্টিনের দাবি, মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ সহ্য করতে পারেনি মেয়ে।অ্যানার মৃত্যুর পর তাঁর মা সংস্থার প্রধান রাজীব মেমানিকে একটি ই-মেল করেন। তাঁর বক্তব্য, সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ দেওয়া হচ্ছিল অ্যানাকে। মায়ের অভিযোগ, তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে । মেয়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি ।
এই ঘটনায় সোচ্চার হয়েছেন উদ্ধবপন্থী শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। তিনি এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে লেখেন, ‘আমি ভারাক্রান্ত। অ্যানার এটা প্রাপ্য ছিল না। ওঁর মায়ের হৃদয় বিদারক ইমেল কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ভাবতে বাধ্য করবে। মানসিক স্বাস্থ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উপলব্ধি করতে হবে। সংস্থাগুলিকে আরও মানবিক হতে হবে।’
২০২৩ সালে সিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন অ্যানা সেবাস্টিয়ান পেরাইল। চলতি বছরের মার্চমাসে যোগ দেন পুনের ওই ফার্মে। এটাই ছিল তাঁর প্রথম চাকরি। তাঁকে প্রতিদিন সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করতে হতো । সেই কারণেই নানা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল মেয়েকে।
তরুণীর মা ই-মেলে লেখেন, দিনরাত উদ্বেগে ভুগতেন অ্যানা। মানসিক অবসাদের কারণে রাতে ঘুম হতো না। তবুও সংস্থার জন্য সাধ্যের বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করতেন তিনি। অনিতা অগাস্টিন লেখেন, ‘কাজের চাপ সামলাতে না পেরে অনেক কর্মীই ওই ফার্ম ছেড়ে চলে যান। কিন্তু অ্যানার বস ওকে বলেন, আরও পরিশ্রম করে সকলকে ভুল প্রমাণ করতে।অনেক রাতেও অতিরিক্ত কাজ দিতেন।’
অ্যানার কাজের সমস্যা বর্ণনা করতে গিয়ে মা লেখেন, ‘মেয়ের এমন অবস্থা হত, অফিসের পরে বাড়িতে ফিরে পোশাক বদলের শক্তিটুকুও আর থাকত না। এমনকী উইকএন্ডেও কাজ দেওয়া হত ওঁকে। অফিসিয়াল ডিউটি ছাড়াও মৌখিকভাবে ওঁকে অন্য কাজ করতে বলা হতো। আমি অনেকবার বারণ করেছি ওঁকে অতিরিক্ত চাপ নিতে। ‘ তিনি লেখেন, একবার সারা রাত জেগে রিপোর্ট তৈরি করতে হয়েছিল মেয়েকে। সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা ভাগ করে নেন অনিতা অগাস্টিন। তিনি বলেন, ‘একবার বস ওঁকে ফোন করে রাতে একটি কাজ দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন পরদিন সকালের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। অ্যানা অফিসে তাঁর সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি । কিন্তু ও কখনও হাল ছাড়েনি। আমরা ওঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছিলাম। বুঝতে পারেনি এত কাজের চাপ ওকে চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে ।’
অতিরিক্ত কাজের চাপকে সংস্থার পক্ষ থেকে মহৎ কাজ হিসেবে দেখানো হতো বলে অভিযোগ অ্যানার মায়ের। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চাপে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন মেয়ে ।
অনিতা অগাস্টিনের কথায়, ‘আমার মেয়ের মৃত্যু এই ধরনের সংস্থাগুলির সতর্ক হওয়ার মতো ঘটনা। ওয়ার্ক কালচার নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত কোম্পানিগুলির। কর্মীদের শরীর-স্বাস্থ্যের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’