• facebook
  • twitter
Sunday, 30 March, 2025

বিচারপতি বর্মার বাসভবনের আশেপাশে, মিলল আরও আধপোড়া নোট

টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না, দাবি বিচারপতির

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবনে আগুনে পুড়ে যাওয়া নোটের বান্ডিলের ছবি এবং ভিডিও শনিবার প্রকাশিত হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ ও দমকল বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া এই সব ছবি এবং ভিডিও তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ইতিমধ্যেই। এরপর রবিবারও যশবন্ত বর্মার বাসভবনের কাছে পাওয়া গিয়েছে আধপোড়া নোটের টুকরো। এক সংবাদ সংস্থা তাদের সমাজমাধ্যম হ্যান্ডলে রবিবার দুপুরে একটি ভিডিও পোস্ট করে। সেই ভিডিও-য় দেখা গিয়েছে, জড়ো করে রাখা শুকনো পাতার মধ্যে আধ পো়ড়া বেশ কিছু ৫০০ টাকার নোটের টুকরো রয়েছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বিচারপতি বর্মার বাসভবনের কাছ থেকেই সেগুলি উদ্ধার করা হয়।

দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায়ের বক্তব্য এবং বিচারপতি বর্মার প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর, দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না শনিবার বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। শীর্ষ আদালত যে কমিটি গঠন করেছে, সেখানে তিনটি হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতি রয়েছেন। বিচারপতি বর্মাকে বিচারকাজ থেকে বিরত থাকার কথাও বলা হয়েছে।

এই বিতর্কের মধ্যেই ফের রবিবার দুপুরে সাফাইকর্মীরা দাবি করেন, তাঁরা বিচারপতি বর্মার বাসভবনের কাছে আবর্জনা পরিষ্কার করার সময়ে ময়লার স্তূপের মধ্যে আধপোড়া নোটের টুকরো খুঁজে পান। ইন্দ্রজিৎ নামে এক সাফাইকর্মীর দাবি, তাঁরা চার-পাঁচ দিন আগেও এই এলাকায় আবর্জনা পরিষ্কারের সময় আধপোড়া ৫০০ টাকার নোটের টুকরো খুঁজে পেয়েছিলেন। এর পরে রবিবার ফের নোটের পোড়া অংশ দেখতে পেয়েছেন তাঁরা, এমনটাই দাবি করেছেন। একই দাবি করেছেন অপর এক সাফাইকর্মী সুরেন্দ্রও। যদিও বিচারপতি বর্মার বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁরা কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা শুধুমাত্র আবর্জনা পরিষ্কারের কাজই করে থাকেন।

১৪ মার্চ বিচারপতি যশবন্ত বর্মার সরকারি বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর একটি ঘরে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে জানা যায় প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ১৫ কোটি। তবে টাকার সঠিক অঙ্ক নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। টাকার সন্ধান পাওয়ার পরই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বৈঠক বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হবে। যদিও শুক্রবার ফের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দেয়, বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা হিসেব বহির্ভূত টাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেওয়া হয়নি। এই বদলির বিষয়টি আলাদা।

এই ঘটনার পর বিতর্ক বাড়তে থাকে। পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্টও। হিসেব বহির্ভূত টাকার অনুসন্ধানের জন্য শীর্ষ আদালত একটি কমিটি গঠন করে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে শীর্ষ আদালতের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয় পোড়া টাকার ছবি এবং ঘটনার দিনের ভিডিও। সেই সঙ্গে রয়েছে বিচারপতি বর্মার বক্তব্যও। সেই সব ভিডিও ও ছবি ঝড়ের গতিতে সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টির গভীরে গিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ করেন।

এদিকে বিচারপতি বর্মা তাঁর বক্তব্যে গোটা বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি কখনওই ওই টাকার বান্ডিল দেখেননি। এই টাকা সম্পর্কে জানেনই না কিছু। তাঁর আরও বক্তব্য, ঘটনার দিন তিনি দিল্লিতে ছিলেন না। স্ত্রীর সঙ্গে ভোপালে গিয়েছিলেন। যে ঘর থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, সেটি তাঁর মূল বাসভবনের বাইরে বলেও দাবি করেছেন বিচারপতি বর্মা। তাঁর দাবি, ওই ঘরে বাইরের লোকজন যেমন— মালি, পরিচারক, সাফাইকর্মীরা যাতায়াত করে থাকেন। যদিও, দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই যুক্তি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি বর্মার নামে বরাদ্দ ৩০, তুঘলক ক্রিসেন্ট বাংলোয় গত ১৪ মার্চ সীমানার প্রাচীর সংলগ্ন একটি ঘরে আগুন লেগে যায়। দমকলের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেই ঘর থেকে চার-পাঁচটি আধপোড়া বস্তা পাওয়া যায় যেগুলি টাকার বান্ডিলে ভর্তি ছিল।