অপেক্ষা ছিলই। আর তা বাস্তব করে সােমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযান-২ থেকে সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হল ল্যান্ডার বিক্রম। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরাের তরফে টুইট করে এই তথ্য জানানাে হয়েছে। গত ২২ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় ইসরোর সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল চন্দ্রযান-২।
তার ৪০ দিনের মাথায় সােমবার চন্দ্রযান-২ থেকে বিচ্ছিন্ন হল ল্যান্ডার বিক্রম। এরপর কী? বর্তমানে ল্যান্ডার বিক্রম বৃত্তাকার কক্ষপথের যে অবস্থানে রয়েছে, সেখান থেকে চাঁদের দূরত্ব ১১৯ কিলােমিটার X ১২৭ কিলােমিটার। এই অবস্থাতেই বৃত্তাকার কক্ষথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে এটি। এই প্রদক্ষিণের জেরে ধীরে ধীরে চাঁদ থেকে ল্যান্ডার বিক্রমের দূরত্ব কমে আসবে ১০০ কিলােমিটারের ভিতরে। তখনই চাঁদে অবতরণের প্রস্তুতি শুরু হবে।
চাঁদে অবতরণ কবে? ইসরাে জানিয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে ল্যান্ডার বিক্রম। এই ল্যান্ডার বিক্রমের ভিতরে রয়েছে রােভার প্রজ্ঞান। অবতরণের পরই ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসবে রােভার প্রজ্ঞান। প্রসঙ্গত, সােভিয়েত রাশিয়া, আমেরিকা, চিনের পর ভারতই চতুর্থ দেশ হবে যারা চাঁদে পা ছোঁয়াবে এবং প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে ভারত। কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে। বেলা সােয়া ১টা উল্লাস করে উঠলেন ইসরাের মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ঠিক এই সময়েই চাঁদের পঞ্চম কক্ষপথে চন্দ্রযান-২ থেকে আলাদা হয়ে গেল ল্যান্ডার বিক্রম।
ইসরাে জানিয়েছে, গতি কমিয়ে এরপর ধীরে ধীরে চাঁদ মুলুকের আরও কাছাকছি পৌঁছবে সে। চন্দ্রপৃষ্ঠের ১০০ কিলােমিটার উপর থেকে চাঁদকে পাক খাবে চারদিন। তারপর সফট ল্যান্ডিং হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।
শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চপ্যাডকে গুডবাই জানিয়েছিল ২২ জুলাই। এক মাসের মাথায় ২০ আগস্ট পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে ঢুকে গিয়েছিল লুনার অরবিট অর্থাৎ চাঁদের কক্ষপথে। একটার পর একটা কক্ষপথের বেড়াজাল কাটিয়ে ভারতের চন্দ্রাভিযান আজ, সােমবার সাফল্যের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখল। ৪৩ দিনের মাথায় আজই ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে নিজের থেকে আলাদা করল চন্দ্রযান-২। পেটের ভিতর রােভার ‘প্রজ্ঞান’কে পুরে সে এবার এগিয়ে চলেছে চাঁদের আরও কাছাকাছি।
লুনার অরবিটে যে যে পথে এগিয়ে গেছে চন্দ্রযান- ২০ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে লিকুইড চেম্বার ইজেক্ট করে চাঁদের প্রথম কক্ষপথ ১৮০৭৮ কিলােমিটার ইনসারশন হয়েছিল চন্দ্রযান-২ এর। সময় লেগেছিল ১৭৩৮ সেকেন্ড। পরদিন ২১ আগস্ট, বেলা ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ ১১৪ কিলােমিটার * ১৮০৭২ কিলােমিটার প্রথম কক্ষপথ ছেড়ে পা রাখে ১১৮ কিলােমিটার * ৪৪১২ কিলােমিটার দ্বিতীয় কক্ষপথে। এই সফরে সময় লেগেছিল ১২২৮ সেকেন্ড।
২৮ আগস্ট সকাল ৯টা ৪মিনিটে হই হই করে চাঁদের তৃতীয় কক্ষপথে ঢুকে পড়ে চন্দ্রযান-২। তৃতীয় কক্ষের । ১৭৯ * ১৪১২ কিলােমিটার পরিধিতে সফল ইনসারশনে সময় লাগে ১১৯০ সেকেন্ড। ৩০ আগস্ট, সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে চাঁদের উপবৃত্তাকারে তৃতীয় কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যায় চন্দ্রযান। এগিয়ে যায় ১২৪ * ১৬৪ কিলােমিটার চতুর্থ কক্ষের দিকে।
হাই ফাইভ পূর্ণ করে গতকাল, ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে ঠিক ৫২ সেকেন্ডের মাথায় পাঁচ নম্বর কক্ষপথে নিখুঁতভাবে ইনসারশন হয় চন্দ্রযানের। এটাই শেষ কক্ষপথ। এবার চাঁদের মাটিতে নামার অপেক্ষা।
৭ সেপ্টেম্বরের আগে কী কী হতে চলেছে- ২ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে চন্দ্রযান থেকে আলাদা হবে ল্যন্ডার বিক্রম। সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য ছক সাজানাে শুরু করে দিয়েছে সে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ থেকে ১০ টার মধ্যে এবং ৪ সেপ্টেম্বর ভােররাত তিনটে থেকে চারটের মধ্যে দু’দফায় বিক্রমের পথ বদল করা হবে। কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার এটি বিশেষ প্রক্রিয়া। এরপর শুরু হবে চাঁদকে ঘিরে পরিক্রমা। ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১ টা ৫৫ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) পালকের মতাে নেমে যাবে ল্যান্ডার বিক্রম। ৭ সেপ্টেম্বর ভাের সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছটার মধ্যে ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে যাবে রােভার ‘প্রভজ্ঞান’। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে শুরু করবে কাজ। ল্যান্ডার বিক্রম থেকে এভাবেই বেরিয়ে আসবে রােভার ‘প্রজ্ঞান’।
ইলাস্ট্রেশন : ইসরাে চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলােমিটার দুরে। ইসরাের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, নামার আগে আর চারদিন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে র্যান্ডার। তারপর ধীরে সুস্থে নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) ইজেক্ট করবে ২৭ কোজি ওজনের ৬ চাকার রােভার ‘প্রজ্ঞান’কে। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ছবি ও তথ্য পাঠাবে সে। চাঁদের এক পক্ষকাল অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে কাজ করতে পারবে ‘বিক্রম’। রােভারও সচল থাকবে ১৪ দিন ধরে। প্রতিবারে ১৫০-২০০ মিটার অবধি গুটি গুটি পায়ে এগােতে থাকবে সে। পরীক্ষামূলক ভাবে চাঁদের মাটি, তার রাসায়নিক উপাদানের কাটাছেড়া করতে পারবে। প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর অরবিটারের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় তথ্য গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠাবে রােভার।