মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক মোদির , রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা 

দিল্লি, ২৯ জুলাই –  রবিবার মণিপুরের রাজ্যপাল পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অনুসুইয়া উইকেকে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সঙ্গে বিকেলে দিল্লিতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেই অনুমান রাজনৈতিক মহলের। মণিপুরে জাতিদাঙ্গা শুরুর দেড় বছর পর অবশেষে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক শেষে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পর আলাদা করে কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী। মণিপরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মিনিট কুড়ি বৈঠক হয়। বৈঠকের সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, ওই রাজ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন বীরেন সিং ।  উল্লেখ্য, অসমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যই আপাতত মণিপুরের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে দুই জনজাতির সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুর। তার পর এই প্রথম মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে একটা বড় সময় নীরবই থেকেছেন মোদি । তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। রবিবার বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্য দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে হয়েছে দু’দিনের ওই বৈঠক। এই আবহে রবিবার বীরেনের সঙ্গে বৈঠক হয় মোদির । সূত্রের খবর, ওই রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট কথা হয় তাঁদের মধ্যে। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এক  আধিকারিকের কথায়, ‘‘মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা আগামী দিনে প্রকাশ করা হতে পারে।’’
 
২০২৩ সালের মে মাস থেকে কুকি এবং মেইতেই জনজাতির সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। মারা গিয়েছেন অন্তত ২২৫ জন। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার। এখন সেই হিংসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। যদিও মাঝেমধ্যেই মণিপুরে বিক্ষিপ্ত ভাবে সংঘর্ষ বা প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে নারী নিগ্রহের অভিযোগও। ১৮ মাস ধরে এই ঘটনা চললেও এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যত নীরবই ছিলেন। গত বছর জুলাই মাসে মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় তিনি ব্যথিত এবং ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মোদি। তবে কখনও মণিপুরের পরিস্থিতি দেখতে সেখানে যাননি তিনি ।এই নিয়ে সোচ্চার  হয়েছে বিরোধীরা।
 
অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে মোদি  ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট ধরে জবাবি বক্তৃতা করলেও মণিপুরের হিংসা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তা নিয়েও সংসদে স্লোগান দিয়েছেন বিরোধীরা। হিংসা শুরুর পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের সঙ্গে রবিবারের আগে পর্যন্ত তাঁর মুখোমুখি বৈঠকও হয়নি। এই আবহে রবিবার দু’জনের বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, দিল্লি গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন বীরেন সিং । তবে আশ্চর্যের হল, ওই বৈঠক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অফিস এবং মুখ্যমন্ত্রীর অফিস  থেকে কিছু জানানো হয়নি। যদিও অরুণাচল সহ অনেক রাজের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোদির বৈঠকের ছবি ও খবর পিএমও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছে।তবে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও ছবি তাঁর তরফে সমাজমাধ্যমে বা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়নি।মনে করা হচ্ছে সংসদ চলছে বলে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়টি সরকারিভাবে জানানো হয়নি।