দীর্ঘদিনের লকডাউন থেকে আনলক ফেজ ১ চলছে দেশে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ, শপিং মল, অফিস খুলেছে দেশে। জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার দিকে। এমনই এক পরিস্থিতিতে করোনার গ্রাফও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিছুতেই পরানো যাচ্ছে না লাগাম। প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারিতে এসে গেছে ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের নিরিখে ব্রিটেনকে টপকে বিশ্বে চতুর্থ হল ভারত।
সংক্রমণের গতি বৃদ্ধিতে নতুন শঙ্কা জাগছে দেশজুড়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ১০,৯৫৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রামিত হয়েছে। দেশে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বৃদ্ধি এই প্রথম ১০ হাজার ছাড়াল। দেশে কোভিড ১৯-এ মোট আক্রান্ত হলেন ২,৯৭,৫৩৫ জন। ব্রিটেনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২,৯৩,০০০। বৃহস্পতিবারই করোনায় মৃত্যুর হিসেবে কানাডাকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৬ জনের। এর ফলে করোনায় দেশে মোট ৮,৪৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুধু মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ৩,৫৯০ জন। গুজরাতে মারা গিয়েছেন ১,৩৮৫ জন। রাজধানী দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ১,০৮৫ জন মারা গিয়েছে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এ রাজ্যে মোট করোনায় মারা গিয়েছেন ৪৪২ জন। মধ্যপ্রদেশে মারা গিয়েছে ৪৩১ জন। তামিলনাড়ু ৩৪৯, উত্তরপ্রদেশ ৩৪৫। এমনই এক পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ফের ভিডিও কনফারেন্স করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আগামী ১৬ ও ১৭ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি দেশজুড়ে উদ্বেগজনক জায়গায় চলে যাওয়ায় এই বৈঠক বলে জানা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে থাকবেন বলে খবর। এর আগেও লকডাউন চলাকালীন বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদি।
কেন্দ্রের উপদেষ্টা তথা নয়াদিল্লির এইমস-এর অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া আগেই জানিয়েছিলেন, আগামী দু-তিনমাসের মধ্যে সংক্রমণ শীর্ষে পৌছতে পারে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও কয়েকদিন আগে দাবি করেছেন, প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না।
যদিও কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআর-এর অধিকর্তা বলরাম ভার্গব বৃহস্পতিবারই সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, এখনও ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি। কনটেনমেন্ট এবং নন-কনটেনমেন্ট দু’ধরনের জোনেই তারা সার্ভে চালিয়েছেন। এই সার্ভেতে উঠে এসেছে শহরের বস্তি এলাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি গ্রামাঞ্চলের বক্তির থেকে অনেক বেশি। করোনার মৃত্যুর হার ০.০৮ শতাংশ। ফলে ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি বলে আইসিএমআর-এর অধিকর্তার দাবি।
আইসিএমআর-এর থেকে এই দাবি করা হলেও বেশ কয়েকটি রাজ্যে সীমান্ত সিল করা হয়েছে। বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে কর্নাটক, রাজস্থানও। তারা তাদের সীমান্ত সিল করেছে। পরিযায়ী শ্রমিক ফেরায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন।
একদিকে করোনাকে রুখে দেওয়া, অন্যদিকে দেশকে আনলকের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিভাবে সম্ভব তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে দেশজুড়ে জোর গুজব ফের লকডাউন হতে পারে। যদিও পিআইবির তরফ থেকে জানানো হয়েছিল লকডাউনের নতুন কোনও খবর নেই। এমন আবহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নতুন কোনও পরামর্শ দেন কিনা তা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে দেশজুড়ে।
এদিকে, রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত লকডাউন কঠোর করার জন্য সব রাজ্যকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লার। তবে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ৪৮ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্র পুলিশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ জন পুলিশকর্মী। বাংলার পাশাপাশি মহারাষ্ট্র জুড়ে জোর গুজব ১৫ জুন থেকে ফের লকডাউন হবে এই দুই রাজ্যে। হোয়াটস অ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে টুইট করে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছে, গুজবে কান দেবেন না, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই গুজব রটানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে থেকে মহারাষ্ট্রে শুরু হয় মিশন বিগিন এগেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষকে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। নিরাপত্তা বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সবাইকে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবারই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ যদি নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাইডলাইন না মেনে চলেন, তাহলে ফের লকডাউন করতে হবে। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়াতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সক্রিয় হয় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস। সেখান থেকে ট্যুইট করে বলা হয়, লকডাউন নতুন করে জারি হচ্ছে না। আপনারা ভিড় করবেন না। সরকারের নির্দেশিকা মেনে চলুন। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জনগণের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছে।
এদিকে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকার নিয়ম করেছে, সরকারি অফিসগুলিতে ১৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালাতে হবে। আর বেসরকারি অফিসগুলি চলবে ১০ শতাংশ কর্মী নিয়ে। রাজধানী দিল্লিতেও ফের লকডাউন হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু দিল্লি সরকারের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল আর লকডাউন বাড়ানো হবে না। শুত্রবার কেজরিওয়াল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আর লকডাউন বাড়ানো সম্ভব নয়। উত্তরাখণ্ডে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ৩৭ জন।