সরকার গড়তে রাষ্ট্রপতির দরবারে মোদি – নাইডু – নীতীশ 

দিল্লি, ৫ জুন – দিল্লিতে নতুন সরকারের শপথগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী ৮ জুন শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে পারে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সেদিন প্রধানমন্ত্রী পদে ফের শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছে যান মোদি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে তাঁর ইস্তফাপত্র তুলে দেন। এদিন মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাষ্ট্রপতি টুইট করে জানান , প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নরেন্দ্র মোদি ও গোটা মন্ত্রিসভার ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছি এবং তাঁকে আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি। 

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির।  ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে ২৪০টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ফলে বিজেপির পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কেন্দ্রে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়।তবে লোকসভায় এখনও তারাই সর্ববৃহৎ দল। তাছাড়া জোটসঙ্গীদের নিয়ে ২৭২-এর ম্যাজিক ফিগার পার করেছে গেরুয়া শিবির। এই আবহে বিজেপি সরকার গঠনের দাবি জানাতে চলেছে। তাই  দিল্লিতে এনডিএ শিবিরে এখন জোর তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লির বাড়িতে বৈঠকে বসেছে এনডিএ জোট। সূত্রের খবর, নতুন সরকার গড়তে এনডিএ-কে সমর্থন জানিয়েছে টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু ও জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমার। দিল্লি পৌঁছেছেন নীতিশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিন্ডে শিবিরের শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে , বিহারের হ্যাম পার্টির জিতনরাম মাঝি প্রমুখ।  কারণ ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০ টি আসনে জয়ী হলেও একক গরিষ্ঠতা মেলেনি বিজেপির। 

সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় দফতর নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে এদিন রাত থেকে আলাদা করে বৈঠকে বসবেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। তা ছাড়া একেকটি শরিক দলের সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য দলের কয়েক জন প্রবীণ নেতার ওপরও দায়িত্ব বর্তাতে পারে। 


এর আগে সরকার গঠন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুকে নিজেদের দিকে টানতে চেয়েছিল ইন্ডিয়া ব্লক। এমনকী নীতীশ আজ তেজস্বীর সঙ্গেই বিমানে করে দিল্লি যান। ফলে জল্পনা আরও বাড়ে। অন্যদিকে চন্দ্রবাবু সরাসরি জানিয়ে দেন, তিনি এনডিএ-তে আছেন। এই আবহে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এরও  দাবি, শনিবার শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি । 

বুধবার মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক হয়। সেখানে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েও আলোচনা হয়। ১৭ তম মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া নিয়ে সম্মতি জানান সদস্যরা। এরপর দুপুরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাসভবনে পৌঁছন মোদি। সেখানে নিজের পদত্যাগপত্র এবং বিজেপি সরকারের ১৭ তম মন্ত্রিসভার ইস্তফাপত্রও তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে।  

এরপর নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতিকে অষ্টাদশ লোকসভায় নির্বাচিত সাংসদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হবে। এরপর নয়া লোকসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। রীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সর্ববৃহৎ ভোট পূর্ববর্তী জোটকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন। এই ক্ষেত্রে ২৯২টি আসন জেতা এনডিএ-কে সেই আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর লোকসভায় এনডিএ-কে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। এই সবের মাঝে ইন্ডিয়া জোট এনডিএ-তে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে মল্লিকার্জুন খাড়গের গলায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি বিজেপির অন্দরেও একাংশ মনে করছেন, ব্যর্থতার দায় নিয়ে মোদির সরে গিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। বিশেষ করে এবার যখন এনডিও শরিকদের সমর্থন নিয়ে সরকার চালাতে হবে।

বর্তমান মন্ত্রিসভার মেয়াদ শেষ হবে ১৬ জুন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁকে নতুন সরকার গঠন না হাওয়া পর্যন্ত সরকার চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।