দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে চার দিনের সফরে ভারতে এসেছেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। সূচি অনুযায়ী সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছন মহম্মদ মুইজ্জু। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুইজ্জুর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। আগামী দিনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একে অপরের সহযোগিতা করবে, বৈঠকের পর এমনই বার্তা দেন মোদী।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারত সফরে এলেন মুইজ্জু। রবিবার বিকেলে স্ত্রী সাজিদা মহম্মদকে নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে পা রাখেন মুইজ্জু। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কিরীটী বর্ধন সিংহ। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে থাকবেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। সোমবার সকালে নয়া দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুইজ্জু।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে ভারত সফরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। ভারত ও মলদ্বীপের দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোথাও তিনি সেই সময় তুলে ধরেন নিজের বক্তব্যে। সর্বভারতীয় এক সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই ভারত সফরের পরিকল্পনা করছি। আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই মজবুত।’
আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। এছাড়াও শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর। সোমবার এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু বলেন, ‘ভারত মলদ্বীপের বন্ধু। পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে মলদ্বীপের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনও পদক্ষেপ যাতে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে আমরা সে দিকটিও লক্ষ্য রেখে চলি।’
সোমবার বৈঠক শেষে মোদীও বলেন, ‘ভারত সব সময় মলদ্বীপের পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন প্রকল্পে দুই দেশ একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।’
প্রসঙ্গত, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশ সফরে প্রথম ভারতে আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই নিয়ম চলে আসছে। কিন্তু সেই প্রথা প্রথম ভাঙেন মহম্মদ মুইজ্জু। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমে তুর্কি ও পরে চিন সফরে যান তিনি। যদিও এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারত সফরে আসেন। সেই সফরের পর এবার তাঁর দ্বিতীয় সফরে ভারতে এলেন মুইজ্জু।
প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুইজ্জু। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ভারত বাধ্য হয় সেনা সরিয়ে নিতে। এরপর থেকে সম্পর্কের আরও অবনতি হতে শুরু করে, যার প্রভাব পড়ে মলদ্বীপের পর্যটন শিল্পের উপর। কিন্তু এরপর পরিস্থিতির চাপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বদল আনতে বাধ্য হন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। অর্থনৈতিক সংকটের সম্ভাবনা দেখা দেয়, মার খায় পর্যটন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ভারত সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে থাকবেন মুইজ্জু। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মূলত চিনের ঘনিষ্ঠ। চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বৃদ্ধি পেয়েছে মলদ্বীপের। ফলে এই সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কূটনৈতিক মহল।