পুতিনের পর জেলেনস্কিকেও আলিঙ্গন মোদির,  যুদ্ধের ভয়াবহতায় কূটনৈতিক বার্তা ভারতের 

পোল্যান্ড থেকে ১০ ঘণ্টার ট্রেন জার্নির পর শুক্রবার যুদ্ধবিশ্বস্ত ইউক্রেনে পা রাখেন মোদি। এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন সফরে গেলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির আমন্ত্রণেই সে-দেশে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ইউক্রেনে উভয় রাষ্ট্রনেতা একেপড়কে  উষ্ণ স্বাগত জানানোর  পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে নরেন্দ্র মোদির এই আলিঙ্গন কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি এদিন রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের ভয়াবহ পরিস্থিতির ভিডিও ফুটেজ মোদিকে দেখালেন জেলেনস্কি।

ঠিক এরকমই আলিঙ্গনের দৃশ্য অবশ্য গত মাসেও দেখা গিয়েছিল, যখন রাশিয়া সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলিঙ্গন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঠিক সেই দৃশ্য দেখে কূটনীতিক মহলের মত, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে শুরু থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভারত। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান ও বার বার শান্তির বার্তা এসেছে ভারতের থেকে। এই পরিস্থিতিতেই রাশিয়া সফরের মাত্র ৬ সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার কিয়েভ গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিন পোল্যান্ড থেকে ‘রেল ফোর্স ওয়ান’ ট্রেনে কিয়েভ পৌঁছন তিনি। সেখানে করমর্দন করে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান জেলেনস্কি। কূটনৈতিক দিক থেকে মোদির এই সফরের স্পষ্ট বার্তা যে যুদ্ধ নয় শান্তির লক্ষ্যে দুই দেশের পাশেই রয়েছে ভারত। পাশাপাশি এদিন জেলেনস্কির কাঁধে হাত রেখে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের ভয়াবহ পরিস্থিতির ভিডিও ফুটেজ দেখেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।


এদিকে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে ইউক্রেনও। জেলেনস্কির অন্যতম উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিক বলেন, ‘মোদির এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ওদের (রাশিয়া) বোঝাতে হবে যুদ্ধের পরিণতি কী হওয়া উচিত।’ মিখাইল আরও বলেন, যেহেতু নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সুসম্পর্ক আছে তাই মোদির এই সফরের প্রভাব পড়বে রাশিয়ার উপর।

ইউক্রেনের জাতীয় সংগ্রহশালায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেনের যে সমস্ত শিশু প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর সংঘাতের নথি এই সংগ্রহশালায়। ইউক্রেনের মানুষদের বীরত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে এই জাতীয় সংগ্রহশালা।

এর পর মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। অহিংসার এবং শান্তির দূত মহাত্মা গান্ধী বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। গান্ধীজির ১৫১-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে এভি ফোমিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে ব্রোঞ্জের মূর্তি উন্মোচন করা হয়।

উল্লেখ্য, গত মাসে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন মোদি। সেই সময়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত ও আলিঙ্গনের তীব্র নিন্দা করেছিলেন জেলেনস্কি। বলেছিলেন, ‘মস্কোতে বিশ্বের সবচেয়ে বর্বর অপরাধীকে আলিঙ্গন।’ তার পরেই জানা যায়, কেবল রাশিয়া নয় ইউক্রেন সফরেও যাবেন মোদি। তবে কিয়েভে পৌঁছনোর আগেই শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিতে শোনা গিয়েছিল মোদিকে। তিনি বলেন, বন্ধু এবং সঙ্গী হিসাবে ভারত চায় পূর্ব ইউরোপে শান্তি ফিরুক। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আমার যা কথা হয়েছিল, সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে। শান্তিপূর্ণভাবে যেন এই সমস্যা মেটানো যায়, সেই বিষয়টি তুলে ধরব।”