দেশের কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ব্রতী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ পদ্ধতিগতভাবে নতুন কর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সূচনা করেন। তিনি বলেন, ফেসলেস কর মূল্যায়ন পদ্ধতি দ্বারা একদিকে যেমন কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসা সম্ভব হবে, ঠিক তেমনই দুর্নীতির প্রবণতা হ্রাস পাবে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ব্যবস্থা ট্রান্সপারেন্স ট্যাক্সেশন -অনারিং দ্য অনেস্ট প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কর ব্যবস্থার জটিলতা হ্রাস করাও স্বচ্ছতা নিয়ে আসার লক্ষ্যে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হল। ১.৫ কোটি মানুষ সময়মতো কর দেন, যা নেহাতই কম। এতদিন ধরে যারা কর ফাঁকি দিয়ে এসেছেন, তারা নির্ভয়ে বকেয়া কর জমা করুন। দেশ গড়ার কাজে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা আবশ্যক।
ট্রান্সপারেন্স ট্যাক্সেশন -অনারিং দ্য অনেস্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, স্বাচ্ছ কর ব্যবস্থা ও সততার সম্মান প্রদান। কর দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, দেশে স্বচ্ছ ও সরল কর ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে ট্রান্সপারেন্স ট্যাক্সেশন -অনারিং দ্য অনেস্ট প্ল্যাটফম একটা যুগান্তকারী একটা পদক্ষেপ। ফেসলেস কর মূল্যায়ন ব্যবস্থা দ্বারা আয়কর রিটার্ন ফাইল করার পর মূল্যায়নে প্রত্রিয়াগত দীর্ঘসুত্রিতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন, গত ছ’বছরে দেশে কর ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রক্রিয়াগত সংস্কারের মাধ্যমে কর ব্যবস্থার জটিলতা কমিয়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দাতাদের হয়রানি কমিয়ে আস্থা অর্জন করা গেছে। আর এগুলো সম্ভব হয়েছে, আয়কর আধিকারিকদের পরিশ্রমের ফলে।
তিনি বলেন, দেশে যেমন অসৎ মানুষজন রয়েছেন, তেমন সৎ করদাতারাও রয়েছেন। তাদের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রের সরকার বদ্ধপরিকর। আমার সরকার চায় সৎ করদাতারা তাদের উপযুক্ত সম্মান পান। তাদের যাতে কোনও রকম জটিলতা ও হয়রানির শিকার হতে না হয়, তা দেখা আমাদের কর্তব্য।
দেশের করনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে নির্মলা সীতারমন ফেসলেস মুল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখেও আজ দেশবাসী একই কথা শুনলেন। তিনি বলেন, কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা থাকা খুব দরকার। আজ নতুন যে প্ল্যাটফর্ম চালু করা হল, তাতে কর ব্যবস্থা ফেসলেস হয়ে যাবে ফলে করদাতাদের আয়কর অফিসে যেতে হবে না, কোনও আধিকারিকের সঙ্গেও দেখাতে হবে না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, মিনিমাম গভর্মেন্ট ও ম্যাক্সিমাম গভর্নেন্স নীতি প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আমরা ওই লক্ষ্যে এগিয়ে দেশের নাগরিকদের জীবনে সরকারি হস্তক্ষেপ কমানোর লক্ষ্যে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হল।
তিনি বলেন, আজ থেকে নতুন কর ব্যবস্থা বহাল হল। পুরোদমে ফেসলেস কর ব্যবস্থা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে। অনলাইন রিটার্ন দাখিলের পর এখন থেকে মূল্যায়নের পদ্ধতিতে আধিকাকিদের ভূমিকা ও দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশাপাশি, করদাতাদের থেকে বাড়তি তথ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলার পদ্ধতি থেকে সরে দাঁড়ানো গেছে। কর ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত সংস্কারের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এখনও দেশের প্রায় সবকটি আয়কর অফিসে করদাতাদের নথি ত্রুটিনি, আবেদন ও নোটিশ ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় পুরোটাই সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিস্টেম দ্বারা করা হবে। কোনও নোটিশ পাঠাতে হলে সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিস্টেম থেকে তা করদাতাকে পাঠানো হবে। শুধু তাই নয়, করদাতা প্রয়োজনে মেসেজ করে জবাবও দিতে পারবেন। তার জন্য করদাতাকে আয়কর অফিসেও যেতে হবে না, আয়কর আধিকারিকদের সঙ্গেও দেখা করতে হবে না। ‘জান পেহেচান’ যুগের অবসান ঘটতে চলেছে। বকেয়া কর সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে সমঝোতার যুগ শেষ। তিনি বলেন, দেশে কর্পোরেট করের হার ৩২ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে নামানো হয়েছে। নতুন কারখানায় কর কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের কর নীতি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল বটে, তবে খুব ধীর গতিতে চলেছে। দেশের মানুষকে ভুগতে হয়েছে। সৎ করদাতারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, চলতি আর্থিক বর্ষে দেশে লকডাউন চলাকালীন সময়েও খুচরো ব্যবসায় লক্ষণীয় মাত্রায় বিনিয়োগ হয়েছে।