অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে করোনা মোকাবিলায় বিরোধী নেতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করলেন। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনে কথা বলেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রতিভা পাতিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, দেবে গৌড়া, বিরোধী কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি, মমতা ব্যানার্জি, অখিলেশ যাদব, নবীন পট্টনায়ক প্রমুখের সঙ্গে।
দেশে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার গুরুত্ব অনুভব করায় বিরোধীপক্ষের নেতারা মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কারণ দেশে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন ঘোষণার আগে তিনি দেশের কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেননি। এমনকী দেশের কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও তিনি আলোচনার প্রয়োজন দেখাননি।
Advertisement
লকডাউন ঘোষণার সাতদিন পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দেশের মানুষকে এদিন রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য দিয়া জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমরা সকলেই যে একসাথে করোনা মোকাবিলায় কাজ করছি তার বার্তা দিতেই এই অনুষ্ঠান করা উচিত।
Advertisement
এছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কয়েকজনকে বেসরকারিভাবে ১৪ তারিখে ২১ দিনের লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে এই দলের নেতা করা হয়েছে। ১০ এপ্রিলের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
রবিবার দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে তিন হাজার ছুঁয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৭৯ বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছে। গতকাল থেকে নতুন করে ৪৭২ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে সকল রাজ্যের যে সকল অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক সেসব অঞ্চলে একমাসের মেয়াদে ঘিরে রাখা এবং সিল করে দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ২৭৪’টি জেলায় ২২ মার্চের পর থেকে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সরকারি তরফে মোকাবিলার বিকল্প রাস্তার খোঁজ চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের কুড়ি পাতার এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা না ঘটলে সিদ্ধান্ত অন্যরকমভাবে গৃহীত হবে।
তবে যেসকল স্থানে সংক্রমণের সংখ্যা অধিক সেখানে বসবাসকারী মানুষদের বাইরে আসা বা কোনও ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট স্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হবে। যে সকল ব্যক্তির হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে তাদের অন্তত দুইবার পরীক্ষা করা হবে। যাদের সংক্রমণের মাত্রা কম তাদের স্টেডিয়ামে রাখা হবে এবং যাদের সংক্রমণ মাত্রা অধিক তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হবে।
এছাড়া, অধিক সংক্রামিত এলাকার বিদ্যালয়, কলেজ এবং অফিস কাছারি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। সে সব অঞ্চলে কোনও যাত্রীপরিবহণ ব্যবস্থা রাখা হবে না। কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য পরিবহণ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের এক বুলেটিনে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত নয়, অন্তত তার কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। বুলেটিনে জানানো হয়েছে, যদি করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হত তবে একই পরিবারের সকলেই সংক্রামিত হতেন। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মহেশতলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কারখানায় ব্যক্তি নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরি করছেন।
Advertisement



