ভারতকে অনুদান বিতর্কে ফের সরব হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে মোদীর আমেরিকা সফর ও বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের রেশ কাটতে না কাটতেই দুই দেশের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। আর বার বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মিছরির ছুরি চালিয়ে সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রশ্ন উঠছে, এক্ষেত্রে আসলে ট্রাম্পের উদ্দেশ্যটা কী?
এদিকে ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি পাল্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। বিদেশ মন্ত্রক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সেই (ইউএসএইড) অনুদান নিয়ে ভারত সরকার কোনও কাজ করে না। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল একটি বিবৃতিতে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের তরফে তহবিল সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ হচ্ছে, যা উদ্বেগের।’
প্রসঙ্গত ভারতকে মার্কিন অনুদান নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। এ বার তিনি আমেরিকার থেকে সাহায্য নেওয়ার পরিবর্তে পাল্টা সাহায্য করার দাবি জানালেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আমেরিকার থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা নেয়। এখন ভারতের উচিত আমেরিকাকে সাহায্য করা।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে অনুদান নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতকে অনুদান প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামও করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘ভোটের হার বৃদ্ধির জন্য ২.১০ কোটি ডলার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে! কিন্তু কেন আমরা এই টাকা ভারতকে দেব? আমাদেরও তো ভোটের হার বৃদ্ধি করা দরকার। বরং ওরা আমাদের সাহায্য করুক। সেটা কেমন হবে? ’
শুধু তাই নয়, ফের ভারতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক নিয়ে সরব হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের থেকে প্রচুর সুযোগসুবিধা নেয়। ওদের করের পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা ওখানে কিছু বিক্রি করতে চাইলে ২০০ শতাংশ কর নেওয়া হয়! আর ওদের ভোটের জন্য আমরা টাকা পাঠাচ্ছি কেন?’
বার বার ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর বিতর্কে জড়িয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই অনুদান প্রদান ও তার ব্যবহারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাহলে কি ভারতের নির্বাচন কমিশন তথা সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অপারগ? নাকি আমেরিকার টাকা নিয়ে ভোটে ভারতের জনগণকে প্রভাবিত করা হচ্ছে? সাঁড়াশি চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে। রবিবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, ইউএসএইড নিয়ে ভারত কোনও কাজ করে না। বরং ইউএসএইড-এর আবেদন সাপেক্ষে সরল বিশ্বাসে তাদের ভারতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই টাকা খারাপ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। যা কেন্দ্র সরকারের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের।
এ বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের আধিকারিকরা সম্প্রতি কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন এবং তা অবশ্যই উদ্বেগের। ইউএসএইড নিয়ে আমরা কাজ করি কি না, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। ইউএসএইড-কে ভারতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ওই সংস্থা এখানে কাজ করছে। কিন্তু ওদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল সরল বিশ্বাসে, ভাল কাজের জন্য। এখন কথা উঠছে, আমেরিকার অনুদান খারাপ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, দেশের মানুষের এটা জানার অধিকার আছে যে, কারা সেই খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশকে অর্থসাহায্য করে থাকে আমেরিকা। গত রবিবার ভারতের ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার অনুদান বন্ধের কথা ঘোষণা করে আমেরিকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অভিযোগ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সেই অনুদান আসত ভারতে ভোটের হার বৃদ্ধি করার জন্য। পাশাপাশি বাংলাদেশের ২ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার অনুদানও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই অনুদানও একই ভাবে অপ্রয়োজনীয় বলে দাবি করেছেন তিনি।