বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই চরম অরাজকতা চলছে বাংলাদেশ জুড়ে। হিন্দু, সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, রক্ষা পাচ্ছেন না কেউ। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর চলছে, এমনকী রক্ষা পায়নি দেশের ভাস্কর্যগুলি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি এবং স্মৃতিগুলিকে লক্ষ্য করে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানেও কয়েকশো মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে এবার তীব্র সমালোচনা করলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। সেইসঙ্গে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়েও সরব হন তিনি।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সাক্ষ্য হিসেবে থাকা মূর্তিটি ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হল। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই ঢাকার বুকে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের মূর্তি গুঁড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর সোমবার আগের এবং ভেঙে ফেলা আত্মসমর্পণের সেই সাক্ষ্যবহন করা মূর্তির ছবি দিয়ে পড়শি দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সেদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। ১৯৭১ সালে দুই সীমান্তেই ব্যাপক যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে পাকিস্তান। সেই সময় তারা বাংলাদেশ ছেড়ে কোনওরকমে আত্মসমর্পণ করে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা কেড়ে নেয় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা। ভারত যাদের পাশে ছিল। সেই আত্মসমর্পণের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে গড়ে তোলা হয় একটি মূর্তি। মূল ও নষ্ট করা মূর্তির ছবি পোস্ট করে শশী থারুর লিখেছেন, মুজিব নগরে অবস্থিত শহিদ স্মারক কমপ্লেক্সে ১৯৭১ সালের এই মূর্তি ভেঙে ফেলার দৃশ্য খুবই খারাপ লেগেছে। যা ভারত-বিরোধী শক্তির কাজ। প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মন্দির এবং হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর এরকমটা ঘটল। আমরা এও শুনেছি, সেখানকার মুসলিমরাও বহু হিন্দু মন্দির ও বাড়ি রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন।
এই পরিস্থিতিতে থারুর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অবিলম্বে দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য আবেদন জানান। থারুর লেখেন, বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। এবার ইউনুস সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। সব ধর্মের মানুষকে জীবন ও সম্পত্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ আরও বলেন, বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে ভারত তাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু, এ ধরনের অরাজকতাকে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এদিকে বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ায়, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। বাংলাদেশের অশান্তি ভারতের জন্য চিন্তার কারণ নয় বলেও জানান কংগ্রেস সাংসদ। তবে বাংলাদেশের এই অশান্তির পিছনে পাকিস্তান ও চিনের যে হাত থাকতে পারে, সেই বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি শশী থারুর। থারুর বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষদের পাশে রয়েছি। ১৯৭১ সালেও আমরা পাশে ছিলাম। ভাল-মন্দ সবসময়ই আমরা পাশে ছিলাম। এমনকী, যখন ওদের সরকার আমাদের বন্ধু ছিল না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার প্রশ্নই নেই।”
শশী থারুর বলেন, “এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে হিংসা ছড়ানোর পিছনে পাকিস্তানের আইএসআই-র যোগের সম্ভাবনা থাকতেই পারে। বাংলাদেশে চিনেরও প্রবল অস্তিত্ব রয়েছে, ওরাও এই সুযোগে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবে। এই বিষয়গুলি নিয়েই উদ্বেগ হওয়া উচিত। মহম্মদ ইউনুসের বক্তব্য বা অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।”
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যদি আমরা ওঁকে আশ্রয় না দিতাম, তাহলে এটা ভারতের জন্য লজ্জাজনক হত। যদি আমরা নিজেদের বন্ধুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতাম, তবে কেউ আর আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখত না। যখন কোনও বন্ধু বিপদে পড়ে, তখন আমরা তাকে সাহায্য করতে দু’বারও ভাবি না। আমরা তাদের সুরক্ষিত রাখি। ভারত সেটাই করেছে।”
শেখ হাসিনা কতদিন ভারতে থাকবেন, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “কতদিন এখানে থাকতে চান, তা আমরা স্থির করব না। আপনি বাড়িতে কোনও অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, তাকে প্রশ্ন করেন না যে তিনি কখন যাবেন। আমার মতে আমাদের অপেক্ষা করাই উচিত। অন্য দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা সহ একাধিক বিষয় বিবেচনা করতে হয়। আপাতত আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমাদের গর্ব হওয়া উচিত যে বন্ধুর বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়াতে পেরেছি।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ নিয়ে তিনি বলেন, “অবশ্যই ওখানে হামলা হচ্ছে। কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না ।একই সময়ে এমন কাহিনিও সামনে আসছে যে বাংলাদেশি মুসলিমরা হিন্দু মন্দির ও বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। তাই অনেক খারাপ খবরের মধ্যেও কিছু ভাল খবর আসছে।”