অর্ণব সাহা, শিলিগুড়ি– প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম। ফুঁসছে তিস্তা নদী। পাহাড়ি রাস্তায় একের পর এক ধস নামতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন উত্তর সিকিম। লাচুং, চুংথাম, জঙ্গুতে এখনও আটকে রয়েছেন প্রায় ১২০০ পর্যটক। সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। প্রায় বিচ্ছিন্ন কালিম্পং।
শুক্রবার সকালে নতুন করে ধসের ঘটনা ঘটেছে উত্তর ও দক্ষিণ সিকিমে। এদিন টুং, দক্ষিণ সিকিমের লিঙ্গসে, লিঙ্গে ও পাইয়ংয়ের মূল রাস্তা এবং কাওখোলা ও সুন্তালেও ধস নামে। ফলে বেশ কয়েকটি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্যাটেলাইট বা উপগ্রহের মাধ্যমে সিকিমের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি চালাচ্ছে সরকার। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার পাকশেপ এবং আম্বিথাং এলাকায় একাধিক ভূমিধসের কারণে কমপক্ষে ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার উচ্চ পর্য়ায়ের বৈঠক করেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। একটি প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে যে, বৈঠকে সিকিমের বর্তমান পরিস্থিতি, সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি, রাস্তা সংযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং খাদ্য সরবরাহ সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয়।
বৈঠকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্রিফিং দেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হওয়া ক্ষয় ক্ষতির মূল্যায়ন করা হয়। তাৎক্ষণিক ত্রাণ ব্যবস্থার আপডেটও দেওয়া হয় বৈঠকে।
আধিকারকদের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে এবং ত্রাণের কাজ আরও তাড়াতাড়ি করার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে সর্বাধিকার দেওয়া জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলির উপর ক্রমাগত নজর রাখার বিষয়েও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শ্রী অরুণ উপ্রেতি, সড়ক ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী এন বি ডাহাল সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার রাতে সিকিম থেকে লাচেন যাওয়ার মূল রাস্তার উপর থাকা সাঙ্গেকেলাংয়ের সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে। ফলে লাচেন সহ অন্যান্য এলাকায় আটকে থাকা পর্যটকদের টুং চেকপোস্ট পর্যন্ত নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তার থেকে আর তাঁদের নীচের দিকে নামানো যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের গ্যাংটকে ফেরাতে হলে এয়ারলিফ্ট ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এয়ারলিফ্টও করা সম্ভবপর হয়নি।
শুক্রবার সকালে কালিম্পংয়ের তিস্তাবাজার, মাল্লির ছবিটা ছিল ভয়াবহ। প্রতিটি বাড়িতে ঢুকেছে তিস্তার জল। এদিনও কালিম্পং, দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ রয়েছে। বড় কোনও গাড়ি চলছে না। মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং দুর্গতদের সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।