• facebook
  • twitter
Saturday, 28 December, 2024

দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্তে স্থির থাকতেন মনমোহন

অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় অর্থনীতির আমূল সংস্কার শুরু করেন মনমোহন। অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে বেসরকারি পুঁজি বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির দরজা খুলে দেন তিনি।

ফাইল চিত্র

আদ্যন্ত ভদ্রলোক, মৃদুভাষী, অজাতশত্রু। এই তিনটে শব্দ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংসদে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন নীরবে। তবে আপাতভাবে তাঁকে মৃদুভাষী মনে করা হলেও দেশের স্বার্থে যে কোনও সিদ্ধান্ত মনমোহন সিং নিয়েছেন সুদৃঢ়ভাবে। বিরোধীদের সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে বরাবর অবিচল থেকেছেন তিনি।
মনমোহন সিংয়ের জীবনের পাতা যদি ওল্টানো যায় তাহলে দেখা যাবে। বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কোনও পরীক্ষাতে কখনও দ্বিতীয় হননি তিনি। তাঁকে শুধু মেধাবী ছাত্র বললেই হবে না, তিনি একজন সফল শিক্ষক, দেশের অন্যতম সেরা অর্থমন্ত্রী এবং সর্বোপরি দেশের উদার অর্থনীতির জনক।

১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন মনমোহন সিং। ১৯৭৬ সালে হন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দু’বছর ছিলেন যোজনা কমিশনে। ১৯৮২ সালে মনমোহনকে আরবিআই-এর গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন। এর পর দু’বছর (১৯৮৫-৮৭) তিনি ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন পদে। ১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা, সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বসেন। ১৯৯১ সালের মার্চে ইউজিসি-র চেয়ারম্যান পদে আসীন হন।

১৯৯১ সালে নির্বাচনের পালাবদলের পর নরসিমহা রাওয়ের জমানায় দেশের অর্থমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। ভারতীয় অথনীতিতে যুগসন্ধিক্ষন বোধহয় এটাই। অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় অর্থনীতির আমূল সংস্কার শুরু করেন মনমোহন। অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে বেসরকারি পুঁজি বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির দরজা খুলে দেন তিনি। এর ফলে দেশীয় অর্থনীতিতে নতুন জোয়ার আসতে শুরু করে। ৫ বছর অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন একদিকে যেমন তিনি তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি প্রশংসাও পেয়েছেন অকাতরে।

শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রী হিসেবেই নয় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একের পর এক আর্থিক সংস্কারের সাক্ষী থেকেছে দেশ। ২০০৪ সালে বাইরে থেকে বামেদের সর্মথনে ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। কিন্তু বামেদের সঙ্গে তাঁর সখ্য খুব বেশিদিন টেঁকেনি। ২০০৮ সালে ভারত ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিরোধ লাগে বামেদের। বামেরা হুঁশিয়ারি দেয় এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তাঁরা সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন মনমোহন সিং। তাঁর সরকারের উপর থেকে বামেরা সমর্থন তুলে নেয়। যদিও আস্থাভোটে জিতে টিকে যায় তাঁর সরকার।

সামনে থেকে তাঁকে নরম মনে হলেও তিনি যে কতটা কঠিন তাঁর আরও একটা উদাহরণ হলো খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকা। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে প্রবল বিরোধ বাধে তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর একগুঁয়ে মনোভাবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। তা সত্ত্বেও তাঁকে দমিয়ে রাখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনমোহনকে ‘মিস’ করবেন বলেও জানান।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়