বাল্য বিবাহ রুখতে মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্ট বাতিল করল বিজেপি শাসিত অসম সরকার

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Photo: Twitter | @himantabiswa)

দিসপুর, ২৪ ফেব্রুয়ারি– মুসলিম বিয়ে নিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহন করল বিজেপি শাসিত রাজ্য অসম৷ এখন থেকে এখন থেকে মুসলিম হোক বা হিন্দু বিবাহ ও বিচ্ছেদ, সবটাই করাতে হবে স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অধীনে৷ মুসলিমদের বিয়ে নথিভুক্তির ১৯৩৫ সালে তৈরি আইন ‘অসম মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’ বাতিল করে দিল হিমন্ত সরকার৷ অসমে নাবালিকাদের বিয়ে আটকাকে বর্তমান সরকার গোড়া থেকেই সচেষ্ট৷ সেই অভিযানের অংশ হিসাবে ব্রিটিশ আমলের আইনটি বাতিল করা হল৷ তাতে ছেলে ও মেয়েদের যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছরের কম বয়সিদের বিয়ে নথিভুক্ত করার বিধান ছিল৷
শুক্রবার প্রায় মধ্য রাতে শুরু হওয়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইন বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা৷ রাজ্য সরকার জানিয়েছে, বিয়ে নিবন্ধন আইনে ধর্ম নির্বিশেষে নু্যনতম বয়সে সমতা আনা হবে৷ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, অসম সরকারের এই পদক্ষেপ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ পুরোপুরি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বেশি রাতে এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, বর্তমান সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিতর্কিত আইনটিই বাতিলের সিদ্ধান্ত করেছে সরকার৷ রাজ্যে যে ৯৪জন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার আছেন, সরকার তাদের এককালীন দু লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে৷ নতুন করে মুসলিম ম্যারেজ আইন চালু করবে সরকার৷ তাতে সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়সের সীমা রক্ষা করা বাধ্যতামূলক হবে৷ অর্থাৎ মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর বিয়ের নূ্যনতম বয়স৷
অসমের মন্ত্রী জয়ন্ত মল্লবড়ুয়া বলছেন, “আমরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পথে এগোচ্ছি৷ সেই লক্ষ্যে এই আইন বাতিল করাটা আরও এক পদক্ষেপ৷” অসমের ওই মন্ত্রী জানিয়েছেন, অসমে মোট ৯৪ জন মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার ছিলেন৷ তাঁদেরও এই কাজ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হচ্ছে৷ ওই ৯৪ জনকে সরকারের তরফে এককালীন ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করা হবে৷ ফলে এখন থেকে মুসলিমদের বিবাহের রেজিস্ট্রি করাতে হবে জেলাশাসক এবং জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে৷
অসম সরকার গত দু’ বছর ধরে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে অভিযান চালাচ্ছে৷ সেই অভিযানে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় ৩,৪৮৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ৪,৫১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়৷ সেই বছর অক্টোবরে দ্বিতীয় অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ৯১৫জনকে৷ মামলা দায়ের হয় ৭১০ জনের বিরুদ্ধে৷ ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে গিয়েই বিপদে পড়ে পুলিশ৷ কারণ জানা যায় নাবালিকাদের অনেকেরই বিয়ে মুসলিম ম্যারেজ আইনে নথিভুক্ত করা আছে৷ ফলে আইনত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি৷ অসম সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছিল, রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নাবালিকা বিয়েতেও রাশ টানা দরকার৷ তাছাড়া, অল্প বয়সে মা হওয়ার ফলে বহু মহিলা অকালে গুরুতর রোগভোগের শিকার হচ্ছেন৷ মারাও যাচ্ছেন অনেকে৷ কমিটির সুপারিশ মেনে অভিযানের সিদ্ধান্ত করে সরকার৷
এছাড়া উত্তরাখণ্ডে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয়েছে, সেই খসড়া অসমেও চালু করা যায় কিনা, সেটা খতিয়ে দেখছে অসম সরকার৷ অসমজুড়ে জল্পনা, বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনেই এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পেশ করা যেতে পারে৷ তাছাড়া সেরাজ্যে বহু বিবাহ বিরোধী বিল আসতে চলেছে৷