কেন্দ্রে তৃতীয়বার বিজেপি ক্ষমতায় আসার জন্য কংগ্রেসকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার জন্য কংগ্রেসের ব্যর্থতায় দায়ী। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি করেছে।
প্রসঙ্গত ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া জোট’ আংশিক সফল হলেও বিজেপিকে রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। এরফলে জাতীয় স্তরে জোট রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মমতা অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেসের এই ব্যর্থতার জন্যই ‘ইন্ডিয়া জোটের’ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ সফলতা পায়নি। এবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সেই কথাই বলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতা বইমেলায় সদ্য প্রকাশিত তাঁর নিজের লেখা বইয়ে সেই কথায় উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সেই মেলার উদ্বোধন করেছেন। এই মেলাতেই তাঁর তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই তিনটি বইয়ের মধ্যে একটির শিরোনাম ‘বাংলার নির্বাচন ও আমরা’। বইটি জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।
কারণ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও ইন্ডিয়া জোট সাফল্য পেল না। কারণ কংগ্রেসের ব্যর্থতা। আমরা আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় রাজনীতিতে একটা শক্তিশালী জোট হোক। যেখানে সব বিরোধী দল থাকবে। তারা বিজেপিকে হারাতে পারবে। আমি প্রথম থেকে বলেছিলাম, আমাদের বিকল্প মুখ, ইস্তাহার এবং কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম থাকা উচিত। জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হোক এটা আমার প্রস্তাব ছিল। কংগ্রেসের মনে যাতে কোনও দ্বিধাবোধ না থাকে তার জন্য জোটের সভাপতির পদ তাদের দেওয়া হয়েছিল। তারপরও না হল কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম, না হল যৌথ ইস্তাহার। যে যার বিরুদ্ধে লড়াই করল। সেই ব্যর্থতার জেরেই বিজেপি গরিষ্ঠতা না পেয়েও ক্ষমতায় ফিরল।”
পাশাপাশি, এবারের বইমেলায় মমতার প্রকাশিত তিনটি বইয়ের আরও একটিতে বিজেপি সহ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সুপ্রিমো বিজেপি ও শুভেন্দুকে নিশানা করে বলেন, লোকসভা ভোটের সময় তাঁর ও দলের বিরুদ্ধে যেভাবে কুৎসা রটানো হয়েছে, ভোটে তাঁর জবাব দিয়েছে বাংলার মানুষ।
এদিকে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার কৃতিত্ব কংগ্রেসকে এককভাবে দিতে রাজি নন মমতা। তিনি দাবি করেছেন, জোটের ভোট একজায়গায় হওয়ার ফলেই কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়েছে। কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার আরও চাঞ্চল্যকর মূল্যায়ন, ‘নিজেদের শক্তি নেই। যে সংখ্যক আসন তারা পেয়েছে, সবই শরিক দলের উপর ভর করে। আর বাংলায় তারা ছিল বিজেপি–সিপিএমের সঙ্গে রাম–বাম–শ্যাম জোটে। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের পিছনে মানুষের সমর্থন ও তাঁর উন্নয়নমূলক কাজ। কংগ্রেসের ব্যর্থতার জন্যই বিজেপি পুনরায় কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করল।’
মমতার এই মন্তব্যের পর চর্চা শুরু হয়েছে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূলের ভূমিকা ঠিক কী থাকবে? ইতিমধ্যে শত্রুঘ্ন সিনহা আপের হয়ে প্রচারের সূচি সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, ১ এবং ২ ফেব্রুয়ারি আম আদমি পার্টির হয়ে প্রচারে নামছেন তৃণমূল কংগ্রেসের আসানসোলের সাংসদ। ডেরেক ও’ব্রায়েন–সহ আরও কয়েকজন সাংসদ প্রচারে নামতে পারেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর লেখনিতে উঠে এসেছে, ‘বাংলায় বিজেপি যে কটা আসন জিতেছে সেগুলি কারচুপি করেই। সেগুলি জনতার রায় নয়। রাজ্য থেকে এই অশুভ শক্তিকে প্রায় মুছে দিতে পেরেছি আমরা। হঠাৎ ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে। আর তা যদি সত্য হয় তাহলে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় ঘটেছে।’
উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন। কংগ্রেস সরাসরি আপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে। যেটা ‘ইন্ডিয়া জোটের’ শর্ত ছিল না। জোট গঠনের সময় বলা হয়েছিল, যে দল যেখানে শক্তিশালী, সেই দল সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এটাই ছিল জোটের মূল শর্ত। এখন আম আদমি পার্টিকে নিঃশর্ত সমর্থন করছে তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি), সমাজবাদী পার্টি। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস এবার রাজধানীর মাটিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হয়ে প্রচারে নামছে।
সুতরাং তৃণমূল সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি শরিক দল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করবে এবিষয়ে আর কোনও সন্দেহ রইলো না।