মঙ্গলবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক স্মমেলন করে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এবারের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভাবনাচিন্তা করেছেন তৃনমূল নেত্রী কারণ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বামেরা ছিল দুর্ব্ ল, কংগ্রেসের ভিতও ছিল নড়বড়ে। আর বিজেপি তখন এই রাজ্যে শক্তপোক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু এবার বিজেপি প্রবল প্রত্তিপক্ষ হিসেবে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে । তাই এবারের প্রার্থীতালিকায় মুখ্যমন্ত্রী চমক দেওয়ার চাইতেও চোখ দিয়েছেন স্থানীয় মানুষের কাছে প্রার্থীদের গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়টিতে । এই প্রেক্ষিতে মহিলা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ করা হয়েছে। এবারের প্রার্থীতালিকায় ১৫জন ই মহিলা সদস্য। মমতা এদিন বলেন , এতজন মহিলা প্রার্থী – আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এর মধ্যে এবারেও প্রার্থীতালিকায় অব্যাহত রয়েছে টলিঊডের তারকা দ্যুতি। এর মধ্যে পুরনো মুখ দীপক অধিকারী তথা দেব এবং শতাব্দী রায় তাঁদের নিজেদের কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন। কেন্দ্র বদল করে মুনমুন সেনকে এবার আসানসোল থেকে টিকিট দেওয়া হল। এবারে স্টারডমকে কাজে লাগাতে টলিগঞ্জের দুই মুখ মিমি চক্রবর্তী এবং নুস্রত জাহানকে যথাক্রমে যাদবপুর এবং বসিরহাট থেকে প্রার্থী করলেন তৃনমূল নেত্রী। যাদবপুরে বরাবরই রাজনীতির বাইরের লোককে প্রার্থী করা হয়। গত নির্বাচনে যাদবপুরের প্রার্থী ছিলেন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সুগত বসু। এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যাল্ য় থেকে অনুমতি না পাওয়ায় সেই আসনে নতুন প্রার্থী করা হল মিমি চক্রবর্তীকে। আর বসিরহাটের ইদ্রিশ আলিকে আগামী বিধান্ সভা নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রত্তিশ্রুতির বিনিময়ে সেই আসন দেওয়া হল নুস্রত জাহানকে।
এবার বিভিন্ন কারণে মোট সাতজনকে পুনর্বার টিকিট দেওয়া হয়নি তাঁদের কেন্দ্রে। যাদবপুরের সুগত বসু ছাড়াও তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের সন্ধ্যা রায়, কোচবিহার কেন্দ্রের পার্থপ্রতিম রায় , ঝাড়্গ্রামের উমা সোরেন , বসিরহাটে ইদ্রিশ আলি , কৃষ্ণ নগরে তাপস পাল এবং দক্ষিণ কলকাতায় সুব্রত বক্সি। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর পাশেই ছিলেন এবারে নাম বাদ যাওয়া দুই সাংসদ অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় এবং পেশায় চিকিৎসক উমা সোরেন। বাদ পড়লেও এই দুই মহিলা প্রার্থী দলের অনুগামী হয়ে থাকবেন সেটাও জানিয়ে দেন মমতা। তবে পার্থপ্রতিম রায় দলের অনুগামী হয়ে না থাকলে যে তাঁকে দলের কাজে লাগানো হবেনা তেম্ ন ইঙ্গিত ও দিলেন মমতা। এবারের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় অঞ্চলে জনপ্রিয়তা , প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় রেখেছেন মমতা । এমনকি সূত্রের খবর, গোপন গোয়েন্দাগিরিতে প্রাপ্ত তথ্যকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তৃনমূল নেত্রী। অন্যদিকে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের ভরসার পার্শ্বদ দুই সুব্রতকে নিয়েও নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা। লোকসভার প্রার্থী তালিকায় গেলেন এক সুব্রত (বক্সি) এলেন অন্য সুব্রত (মুখোপাধ্যায়)। বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল সুব্রত বক্সি আর লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না। দলের কাজটাই মন দিয়ে করতে চান। সেই ইচ্ছেতেই সায় দিয়ে মমতা এদিন সুব্রতবক্সির বদলে কলকাতা দক্ষিণ থেকে টিকিট দিলেন মালা রায়কে। এই স্ংবাদ অবশ্য বহু পরে জানতে পেরেছেন মালা রায়। প্রার্থীপদ ঘোষণা হওয়ার বহু পরে তিনি কলকাতা পুরসভা কাজ শেষ করে আসেন কালীঘাটে । অন্যদিকে মন্ত্রী সুব্রত মুখপাধ্যায় এবং শ্যামল সাঁতরাকে মন্ত্রিপদ থেকে লোক্ সভা নির্বাচনী কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে একটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গা করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। যে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন সুব্রতবাবু। অন্যদিকে রোজভ্যালি কান্ডের প্ র থেকে তাপস পালের জনপ্রিয়তা কমায় সেখানে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মহুয়া মৈত্রকেই বাছলেন মমতা। আবার রানাঘাটে সদ্য খুন হওয়া সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রীকে টিকিট দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিলেন মমতা। বললেন , যখন নির্বাচন হবে , তখন ওর বয়স হবে মাত্র পঁচিশ বছর। এতটুকু দুধের শিশু নিয়ে ও কোথায় যাবে ? তাই ওকে প্রার্থী করা হল।
অন্যদিকে অন্য দল থেকে আসা প্রার্থীদেরও মর্যাদার আসন দিলেন মমতা। এর মধ্যে ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে আসা মৌস ম নূর , জনাব আবু তাহের এবং অপূর্ব সরকারকে যথাক্রমে মালদা উত্তর, মুর্শিদাবাদ এবং বহরম্পুরে প্রার্থী করা হল।ঝাড়্গ্রামে বীরবাগা সরেনকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁদেরি সম্প্রদায়ের মানুষের অনুমোদনে। আবার পাহাড়ে এবার তৃনমূলের ব্যানারে লড়ছেন গোর্খা জন মুক্তি মোর্চা ছেড়ে আসা ভূমিপুত্র অমর সিং রাই।
প্রার্থী ঘোষণার আগেই এদিন জেলার অবজার্ভারদের ডেকে বৈঠক করেন মমতা। নতুন বাছাই প্রার্থীদের নিয়ে আস্নন নির্বাচনী লড়াইটিকে রীতিমতো টার্গেট করতে চান মমতা। যাতে বিয়াল্লিশ সইনিক দিয়েই তিনি উনিশের ভোটযুদ্ধে ধরাশায়ী করতে পারেন বিরোধী পক্ষকে।