খেলার মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দান– আজ শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখােমুখি বসবার ঘটনাক্রম তৈরি হবে অন্তত তিনবার। এর মধ্যে দুপুর একটায় এবং রাত আটটায় ইডেন ছাড়া তাঁরা সন্ধে ছ’টায় তাজ বেঙ্গলে বসনে বৈঠকে। যে কূটনৈতিক বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গােটা দেশ। কারণ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলি নিয়ে আলােচনা হবে হাসিনা-মমতার মধ্যে।
যে বিষয়গুলি নিয়ে আলােচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তিস্তার জলবন্টন, এনআরসি, অনুপ্রবেশ সমস্যা, ভিসা সরলীকরণ, সীমান্ত নিরাপত্তা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সরলীকরণ, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পেঁয়াজ আমদানি ইত্যাদি।
এর মধ্যে তিস্তার জলবন্টন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় নিজের দেশেই চাপের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে তিস্তা নদীর জলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন হাসিনা। এর আগে এবছর হাসিনা যখন দিল্লি এসেছিলেন তখনও ফোনে কথা হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু এই বিষয়ে বরাবর বাধা দিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, তিস্তার জল বাংলাদেশকে দিলে উত্তরবঙ্গে জলের সমস্যা হবে। বিকল্প হিসেবে আত্রেয়ী নদীর জল বাংলাদেশকে দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই থেকে তিস্তার জলবন্টন ইস্যুটি থমকেই রয়েছে। এমনকী তিস্তার জল না দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানিও বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিস্তার জলবন্টন নিয়ে অনড় অবস্থানেই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আজকের বৈঠকে এই দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায় কিনা সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে কেন্দ্রও।
উত্তর দিনাজপুল্পে বেশ কিছু নদীর ওপর বাংলাদেশ বাঁধ তৈরি করেছে। ফলে জল কষ্ট বেড়েছে ওই অঞ্চলের কৃষকদের এবং উত্তরবঙ্গে চাষাবাদের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই বিষয় নিয়েও মমতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথা হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি ইস্যুটিও যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে বাংলাদেশকে। ইতিমধ্যেই অসমে চালু হওয়া এনআরসির জন্য যেসব অসমের বাসিন্দা ভারতের ‘নন সিটিজেন’ হিসেবে গণ্য হয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানাে হবে কিনা এই নিয়ে সংশয় রয়েছে হাসিনার মনে। তাই যদিও মােদি বলেছেন কাউকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানাে হবে না। কিন্তু একথা তেমন আশ্বস্ত করতে পারেনি হাসিনাকে।
এছাড়া আগেই বাংলাদেশে রােহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার আবেদনের উত্তরে মুখে কুলুপ দিয়েছেন নরেন্দ্র মােদি। তবে এই এনআরসি নিয়ে হাসিনার বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি জোরালােভাবে এনআরসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলছেন, এই রাজ্যে তিনি এনআরসি চালু করতে দেনে না। আজকের বৈঠকে এনআরসি নিয়েও মমতা হাসিনা আলােচনা হবে।
বাংলাদেশ থেকে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ বিষয়টিকেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলােচনা হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কিছুদিন আগে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের আটক করে রেখেছিল বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী। সেই সময় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের গুলির লড়াইতে বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যুও হয়। অন্যদিকে এই রাজ্যের জেলেও বেশ কিছু বাংলাদেশি বন্দি হয়ে রয়েছে। এই ইস্যুও আসতে পারে আজকের বৈঠকে। ভিসা সরলীকরণের পদ্ধতি নিয়েও আলােচনা হতে পারে।
অন্য যে বিষয়টি আজকের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে, তা হল বাংলাদেশ এবং এই রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সরলীকরণ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে যে মালপত্র যায় বাণিজ্যিকভাবে, তার সরলীকরণ নিয়েও কথা হবে। এই রাজ্য থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটি বাংলাদেশের সঙ্গেবন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও উঠে আসবে বৈঠকে।
এই মুহুর্তে রাজ্যে পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার বিষয় নিয়েও প্রস্তাব দিতে পারেন মমতা। এছাড়া দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানকে আরও বেশি জোরদার করার বিষয়টি আলােচনায় উঠে আসবে।