বুধবার বৈঠক ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতা শরদ পাওয়ারের। এই বৈঠকের অব্যবহিত পরেই সােনিয়া গান্ধি আর দেরি করেননি। সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেস-এনসিপি জোটের সরকার গঠনের সবুজ সংকেত দিয়ে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। নরেন্দ্র মােদির সঙ্গে পাওয়ারের বৈঠকের পর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়ায় যে বিজেপির সঙ্গে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়তে পারেন শরদ পাওয়ার। তাই কংগ্রেসের তরফে আর বিলম্ব করা হয়নি। তবে কি সুত্রে সরকার গঠন হবে মহারাষ্ট্রে?
সুত্রের খবর আড়াই বছর থাকবেন শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী ও পরবর্তী আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী হবেন এনসিপির। প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসনে শিবসেনা প্রমুখ উদ্ধব ঠাকরে। পরবর্তী আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাবে এনসিপি। তবে এনসিপি থেকে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন তা জানানাে হয়নি। সরকারের দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী থাকনে একজন হবেন কংগ্রেসের অপরটি আড়াই বছর করে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন শিবসেনার এবং এনসিপির। এছাড়া তিন দলের মধ্যে মতবিরােধ মেটানাের জন্য এবং যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহনের স্বার্থে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে বলে সূত্রের মারফত জানা গেছে।
আর কোনও বাধা নেই। মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। চলতি মাসের শেষেই সরকার গড়বেন তাঁরা। ফের এমনই দাবি করলেন শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত। তাঁর দাবি, আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যেই যাবতীয় বিষয় স্থির হয়ে যাবে।
বুধবার শিবসেনা সাংসদ বলেন, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের আগেই মহারাষ্ট্রে গঠিত হবে জনপ্রিয় এবং দৃঢ় একটি সরকার। তিনি আরও বলেন, সরকার গঠন নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে যে বাধাগুলি এসেছিল তা এখন আর নেই। আগামীকাল বেলা বারােটার মধ্যেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
সরকার গঠন নিয়ে কংগ্রেস, শিবসেনা ও এনসিপির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। মহারাষ্ট্রের কৃষকদের দুরবস্থা নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন এনসিপি নেতারা। সংসদে বেলা ১২.৩০ নাগাদ এই বৈঠক হওয়ার কথা।
এদিকে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যপালের রিপাের্টে এ দিন রাজ্যসভায় পেশ করেছেন নিত্যানন্দ রাই। মহারাষ্ট্রে সাম্প্রতিক নির্বাচনে ২৮৮ আসনের বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০৫ টিতে জিতেছে বিজেপি। শিবসেনা ৫৬টি এনসিপি ৫৪টি এবং কংগ্রেস ৪৪টি আসনে জয়লাভ করে। শিবসেনা এনসিপির সঙ্গে জোট গড়লে ও কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন দিলে এই জোট ম্যাজিক ফিগার ১০৫ পেরিয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনে রাজ্যসভায় মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এদিনই মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সাথে সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে ফের একবার গুরুত্বপূর্ণ আলােচনায় বসলে কংগ্রেস ও এনসিপির সিনিয়র নেতারা।
নয়াদিল্লিতে শরদ পাওয়ারের বাসভবনে তারা বৈঠক করবেন। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে বিলম্ব হওয়ায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে, রাজ্যপাল ভগত সিং কেশিয়ারি তখন বলেছিলেন কোনও দল যেদিন স্থিতিশীল সরকার গড়ার প্রয়ােজনীয় সংখ্যা নিয়ে হাজির হবে সেদিনই রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তারপর থেকেই সমস্ত দল সরকার গড়ার ব্যাপারে আলােচনা শুরু করেছে।
মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয়েছিল ১২ নভেম্বর থেকে। শিবসেনা সেই সময় গভর্নরের বিরুদ্ধে নতুন সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার অভিযোগ করেছিল। তখন থেকেই শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে আলােচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কমন মিনিমান প্রােগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা ঐক্যমত্যে আসা চেষ্টা চালাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে কংগ্রেস এবং এনসিপি তাদের বিরােধী শিবিরে থাকা শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন নিয়ে আলােচনা চালাচ্ছে। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে শিবসেনা। শুধু কংগ্রেস আর এনসিপির সম্মতির অপেক্ষা মহারাষ্ট্র সরকার গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে অভিমত শিবসেনার।
দিল্লিতে সােনিয়া পাওয়ার বৈঠক হয়েছে দু’দিন আগেই। তারপর পাওয়ারের বাসভবনে ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন কংগ্রেস ও এনসিপি নেতারা। এনসিপির অজিত পাওয়ার, প্রফুল প্যাটেল, সুনীল আটাকারে, ছগন ভুজবাল এবং জয়ন্ত পাতিল উপস্থিত থাকবে বলে জানা গেছে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি আহমেদ প্যাটেল, মল্লিকার্জুন খাগড়ে, পৃথ্বীরাজ চৌহান, অশােক চৌহান ও রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি বালাসাহেব থােরাট উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ২২ নভেম্বর তাঁর বাসভবনে মাতােশ্ৰীতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলােচনা করার জন্য দলীয় বিধায়কদের একটি বৈঠক ডেকেছেন। সােমবার শিবসেনার প্রবীন নেতা সঞ্জয় রাউত পাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন এবং আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন যে শিগগিরই সরকার নেতৃত্বাধীন সরকার পাবে তাঁর দল।
২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজেপি-সেনা জাফরান জোট ২৮৮ সদস্যের বিধানসভায় যথাক্রমে ১০৫ এবং ৫৬টি আসন জিতে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কংগ্রেস এবং এনসিপি যথাক্রমে ৪৪ এবং ৫৪টি আসন জিতেছে। তবে পরে বিজেপি এবং শিবসেনা মুখ্যমন্ত্রীর পদ এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক বাধিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।