আদালত রাজ্য সরকারকে একটি বোর্ড বসানোর নির্দেশ দিয়েছে, যে বোর্ডে লেখা থাকবে, হিন্দু ছাড়া অন্যরা মন্দির চত্বরের ফ্ল্যাগ পোল এলাকার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। সঙ্গে অবশ্য বিচারপতি এও বলেছেন, যদি কোনও অ-হিন্দু মন্দিরে ঢুকতে চান, তাহলে তাঁকে লিখিত দিতে হবে যে তিনি হিন্দু ধর্মে, তাদের আচার -রীতি-নীতি ও দেবতার প্রতি বিশ্বাস রাখেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুন মাসে এক অ-হিন্দু পরিবারের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের। ওই পরিবার পালানি হিলটপে যেতে চেয়েছিল, যেটা মন্দির চত্বরের মধ্যেই অবস্থিত। মন্দির কর্তপক্ষ সেখানে যেতে বাধা দিতেই ওই পরিবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন, কেন তাঁরা যেতে পারবেন না হিল টপে। তাঁদের যুক্তি ছিল, কোথাও এমন কোনও সাইনবোর্ড নেই যেখানে লেখা আছে অ-হিন্দুরা ঢুকতে পারবে না। গত বছরের ওই ঘটনার পর অ-হিন্দুদের পালানি মন্দিরে ঢোকা বন্ধ করতে পালানি হিল টেম্পল ডিভোটিস অর্গানাইজেশনের তরফে আদালতের দ্বারস্থ হন ডি সেন্টিলকুমার। তাঁর আর্জি ছিল, যাতে অ-হিন্দুদের প্রবেশ আটকাতে এই ধরনের একটি বোর্ড বসানো হয়। উল্লেখ্য, ডি সেন্থিকুমার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আরুলমিগু পালানি ধ্যান্দাউথাপানি স্বামী মন্দির ও পালানির উপ-মন্দিরগুলিতে কেবল হিন্দুদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার আর্জি জানিয়ে। এর পরই এই নির্দেশ দিল আদালত।
যদিও এক্ষেত্রে আপত্তি জানায় রাজ্য সরকার। রাজ্যের যুক্তি ছিল, এই ধরনের সাইনবোর্ড বসানো হলে তা পর্যটকদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। কারণ এমন অনেকে আছেন, যাঁরা শুধু মন্দির দর্শন করতেই নয়, পাহাড়ের চূড়া থেকে প্রকৃতির রূপ দেখতেও ছুটে আসেন। তবে আদালতের বক্তব্য, রাজ্যের যুক্তি ঠিক নয় । কারণ, অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ না করলে, যাঁরা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী, তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। বিচারপতির মন্তব্য, হিন্দুদেরও অধিকার আছে স্বাধীনভাবে তাঁদের ধর্মীয় আচার পালন করার।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ‘যদি কোনও অ-হিন্দুর হিন্দু ধর্মের রীতিনীতিতে বিশ্বাস না থাকে, যদি তিনি মন্দিরের নিয়মকানুন মানতে অস্বীকার করেন, তাহলে তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের প্রশ্নই আসে না। আবার অন্যদিকে যদি কোনও অ-হিন্দু, যিনি হিন্দু ধর্মে রীতি-রেওয়াজে বিশ্বাসী নন, তাঁকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হলে, সেটা হিন্দুদের ভাবাবেগের উপর আঘাত করবে।’
আদালত মনে করছে যদি সেরকম হয়, তাহলে সংবিধানে বর্ণিত হিন্দুদের অধিকারের উপর আঘাত হবে।কোনও বাধাবিঘ্ন ছাড়াই যাতে হিন্দুরা পূজার্চনা করতে পারেন, তাঁদের সেই ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করতেই এই রায় বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।