কাল, তিন আগস্ট শুরু হবে মহাযজ্ঞ। তারপর ৫ আগস্ট মন্দিরের ভূমিপূজনে অযোধ্যায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রায় ১৫০ জন ভিআইপি উপস্থিত থাকবেন ভিত পুজোর অনুষ্ঠানে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা, তথা রামমন্দির আন্দোলনের পুরোধা নেতা লালকৃষও আদবানিকে। আদবানির সঙ্গে শনিবার দুপুর পর্যন্ত আমন্ত্রণ যায়নি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা নয়ের দশকের গাড়ায় দেশজোড়া রথযাত্রার অন্যতম নেতা মুরলীমনোহর যোশির কাছেও।
অন্যদিকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অন্যতম অভিযুক্ত তথা বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীকে অযোধ্যা যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। আমন্ত্রণ গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের কাছেও। কিন্তু ৯২ বছর বয়সী আদবানিকে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিজেপির মধ্যে আদবানি ও নরেন্দ্র মোদির দূরত্বের কথা জাতীয় রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। অনেকে বলেন, মোদি-শাহ জমানায় বিজেপিতে পরিকল্পনা করেই লালকৃষ্ণ আদবানি-মূরলীমনোহর যোশিদের একেবারে ট্রাকের বাইরে করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত কয়েক দিন আগেই বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় হাজিরা দিয়েছিলেন বিজেপি’র লৌহপুরুষ। তাঁর আইনজীবীর কথায়, প্রায় সাড়ে ঘণ্টা ধরে লালকৃষ্ণ আদবানিকে এক হাজারের বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। মুরলীমনোহর যোশিও একই কারণে ভার্চুয়াল হাজিরা দিয়েছেন সম্প্রতি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাবরি মসজিদ। অভিযোগ, কয়েক হাজার কর সেবকে অযোধ্যায় নিয়ে গিয়ে যোড়শ শতকের তৈরি সলামি সৌধ ভাঙার ক্ষেত্রে প্ররোচনা দিয়েছিলেন আদবানি-উমা ভারতীরা। গোটা পর্বে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখেছিলেন কল্যাণ সিং।
সমালোচকদের অনেকের বক্তব্য- স্বাধীনতার পর ভারতের বুকে সবচেয়ে বড় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিল সেদিন। কিন্তু সে সব নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন উমা বা কল্যাণরা। তারা প্রকাশ্যেই বলেন ৯২-এর ৬ ডিসেম্বর নিয়ে তাদের কোনও অনুশোচনা নেই। বরং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতীর বক্তব্য- ওই দিনের জন্য আমি গর্বিত। আমাকে জেলে পাঠালে আমি গর্বের সঙ্গেই জেলে যাব।
‘৯০ সাল থেকে শুরু হওয়া রামমন্দির আন্দোলন ও লালকৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। বিহারে রথযাত্রা আটকাতে লালুপ্রসাদ যাদবের সরকার লালকৃষ্ণ আদবানিকে গ্রেফতার পর্যন্ত করেছিল সে সময়।
বিজেপি তথা হিন্দুত্ববাদীদের দীর্ঘদিনের দাবি মান্যতা পেয়েছে আদালতে। গত বছর নভেম্বর মাসে ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ওই জমিতে মন্দির গড়ার অনুমতি দেয়। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন লালকৃষও আদবানিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে রামমন্দির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটটাকেই অস্বীকার করা হচ্ছে।