ভারতের প্রথম রাজ্য হিসাবে উত্তরাখণ্ড সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র বিল বিধানসভায় পেশ করল৷ বিধানসভায় বিল পেশকে ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার৷ এই বিলে একাধিক বিষয়ের কথা বলা হয়েছে৷ বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, দত্তক গ্রহণের মতো বিষয়গুলিতে সকলের জন্য একই আইন চালু হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোল পাহাড়ি এই রাজ্যটি৷ যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বিলে রয়েছে তারমধ্যে একটা হল লিভ-ইন বা একত্রাবাস আইন৷ এই বিলে রয়েছে, যদি কোনও যুগল ‘একত্রবাস’ বা ‘লিভ-ইন’ করতে চান তবে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকদের অনুমতি নিতে হবে৷ আর যদি তাঁদের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়, তবে বাবা-মায়ের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে৷
‘লিভ-ইন’ সম্পর্কের ‘ঘোষণাপত্র’ সঙ্গে রাখতে হবে যুগলকে৷ প্রয়োজনে তা দেখাতে ব্যর্থ হলে যুগলের ২৫ হাজার টাকার জরিমানা এবং তিন মাসের জেল হতে পারে৷ ‘লিভ-ইন’ সম্পর্কে থাকা যুগলের যদি সন্তান হয়, তবে শিশুরা আইনি স্বীকৃতি পাবে৷ কেউ যদি ‘লিভ-ইন’ সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হন তবে সর্বোচ্চ ছ’মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে৷ পাশাপাশি বিলে আরও বলা হয়েছে, যদি ‘লিভ-ইন’ সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে দেরি হয়, সে ক্ষেত্রে তিন মাস পর্যন্ত জেল বা ১০ হাজার টাকার জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে৷
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি৷ সেই কমিটির উপরই দায়িত্ব ছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-র খসড়া তৈরি করার৷ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক এই সংক্রান্ত খসড়া বিল পেশ হয় পুষ্কর সিংহ ধামির মন্ত্রিসভায়৷ রবিবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়ার পর, সোমবার সেই বিল বিধানসভায় পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি৷
এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছে পদ্ম শিবির৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বহুবিবাহ৷ যে কোনও ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম বলবৎ হবে৷ নিয়ম ভাঙলেই কঠোর শাস্তি৷ ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের নূ্যনতম বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ‘রেজিস্ট্রি বিবাহ’ বাধ্যতামূলকের কথা বলা হয়েছে এই বিলে৷
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা আছে এই বিলে৷ দম্পতিকে নির্দিষ্ট সময় ‘কুলিং অফ’ পিরিয়ডে থাকতে হবে৷ সেই সঙ্গে এই বিলে সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরও সহজ করার কথা বলা হয়েছে৷ এ ছাড়াও পৈতৃক সম্পত্তির ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলাদের সমান অধিকার থাকবে৷
তবে সরকারের বিল পেশ করার পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে তারা৷ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যশপাল আর্য বলেন, ‘‘সরকার কোনও আলোচনা ছাড়াই এই বিল পেশ করাতে চায়৷ যা একদমই ঠিক নয়৷’’ একই মত পোযণ করেছেন উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়াতও৷
উত্তরাখণ্ড সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে গুজরাত এবং অসমের বিজেপি শাসিত সরকার৷