দিল্লি, ১৪ মে – বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা সুশীল মোদির জীবনাবসান হয়েছে। সোমবার দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। দীর্ঘদিন ক্যানসার আক্রান্ত সুশীল মোদি গত এক মাস ধরে দিল্লির এইম্সে ভর্তি ছিলেন। মারণরোগের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ক্যাগ করেন তিনি। বিহারে বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। শারীরিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এবারের লোকসভা ভোট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন সুশীল মোদি। গত ৩ এপ্রিল নিজেই সে কথা এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই বিজেপি নেতা। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল। পুরনো স্মৃতিচারনা করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। শোকপ্রকাশ করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বর্ষীয়ান এই বিজেপি নেতার প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে রবিশঙ্কর প্রসাদ-সহ আরও অনেকে। এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করে মোদি লেখেন, আমার দলীয় সহকর্মী এবং কয়েক দশকের বন্ধু সুশীল মোদিজির অকাল প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। বিহারে বিজেপির উত্থান এবং দলের সাফল্যে তিনি অনবদ্য অবদান রেখেছেন। জরুরী অবস্থার তীব্র বিরোধিতা করে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন।”
বিহার বিজেপির তরফে শোকপ্রকাশ করে জানানো হয়, ‘ বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ সুশীল কুমার মোদির মুত্যুর খবরে মর্মাহত বিজেপি পরিবার। আমরা এক মহান যোদ্ধাকে হারালাম, যা আমাদের কাছে এবং গোটা বিজেপি পরিবারের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি।’ বিহারের দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরি এবং বিজয় কুমার সিনহাও এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করেছেন। শোকপ্রকাশ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও।
এক্স হ্যান্ডেলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে সুশীল মোদি লিখেছিলেন, “বিগত ৬ মাস ধরে আমি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমার মনে হয়, এবার মানুষকে তা বলার সময় এসেছে। আমি এবারের লোকসভা ভোটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সব জানিয়েছি। আমি ভারতের প্রতি, বিহারের প্রতি ও দলের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ।”
দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সুশীল কুমার মোদির প্রয়াণ বিহারের রাজনীতিতে বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা। সাতের দশকে গান্ধীবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন থেকে বেশ কয়েকজন নেতা উঠে আসেন বেশ কয়েকজন নেতা তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পরবর্তী সময়ে বিহারের পাশাপাশি জাতীয় রাজনীততে স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি করতে পেরেছিলেন। এঁদের অন্যতম ছিলেন সুশীল মোদি। বিহার রাজনীতিতে নীতীশ কুমারের ‘ঘনিষ্ঠতম বিজেপি নেতা’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন সুশীল মোদি। নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দুবার বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। বিজেপি-জেডিইউ সরকারের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহল বলে, বিজেপি ও নীতীশ কুমারের দলের মধ্যে যোগসূত্রের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। সম্প্রতি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে বিজেপি।
রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই। ১৯৭৩ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের সভাপতি হয়েছিলেন সুশীল। ১৯৯০-২০০৪ সালের মধ্যে তিনবার বিধায়ক হয়েছেন। বিহারের বিরোধী দলনেতার আসনে বসেছেন। ২০০৩-২০০৫ সাল পর্যন্ত বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। বিহারে বিজেপিকে সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলেন তিনি। সুশীল মোদি র এভাবে চলে যাওয়ায় শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল। তিন দশক ধরে বিহারের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বিহারের রাজনীতির পরিমণ্ডলে এ এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।