শুক্রবার শেষ বারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে বসলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। ১০ নভেম্বর অবসর নেবেন তিনি। তবে তার আগে শনি ও রবিবার হওয়ায় শুক্রবারই ছিল তাঁর সুপ্রিম কোর্টে মামলা শোনার শেষ দিন। এজলাসে বসে এদিন অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দেশের প্রধান বিচারপতি। এদিন তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে সবাইকে নমস্কার জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ একইসঙ্গে জানান, ‘আগামিকাল থেকে আর ন্যায়বিচার দিতে পারব না। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট।’ ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চন্দ্রচূড়। তাঁর দুই বছরের চলার পথ শেষ হবে রবিবার।
চন্দ্রচূড়ের পরে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব নেবেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তাঁর হাতে বিচারব্যবস্থা সুরক্ষিত থাকবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে যোগ্য নেতা হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি। তার পরই প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘আমি যদি আদালতে কাউকে আঘাত করে থাকি, তা হলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।’ এদিন সুপ্রিম কোর্টে কর্মজীবনের শুরুর সময়ের দিনের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তরুণ বয়সে এই আদালতে আসতাম। খুঁটিয়ে দেখতাম এই আদালত আর আদালতের পোট্রেট। এরপর আজ রাতে ভাবছিলাম, দুপুর ২ টোয় আদালত খালি হয়ে যাবে, আমি নিজেকে স্ক্রিনে দেখব। আপনাদের সবার উপস্থিতিতে আমি অভিভূত। আমরা কাজ করব, আবার চলেও যাব। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থেকে যাবে।’
প্রধান বিচারপতির অবসরের আগে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিল আইনজীবীদের ভিড়। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতিরাও। উপস্থিত ছিলেন তাঁর উত্তরসূরি বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাও। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি কখনওই বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের এজলাসে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে তিনি তাঁর কর্মজীবনে যা করেছেন তা অতুলনীয়।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বলের মতো আইনজীবীরা। সেখানে দেশের বিচারবিভাগে চন্দ্রচূড়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন আইনজীবীরা।
ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পুরো নাম ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। ২০১৬ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। আট বছর সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন এজলাসে বসেছেন। তাঁর কর্মজীবনে বহু জটিল মামলায় কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। একাধিক ঐতিহাসিক মামলার রায় দিয়েছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার, অযোধ্যা মামলা, শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের অধিকার, ইলেক্টোরাল বন্ড প্রত্যাহার, সম-লিঙ্গ বিবাহ, ৩৭০ ধারা রদ, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের মতো মামলাগুলি রয়েছে ।
তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু খোলনলচে বদলায়। ই-ফাইলিংয়ের আধুনিকীকরণ, অনলাইনে আবেদন, পেন্ডিং মামলার হোয়াটসআপ আপডেট, পেন্ডিং কেসের লাইভ ট্র্যাকিং এবং সর্বোপরি কোর্ট রুমের লাইভ স্ট্রিমিং।
সম্প্রতি ভুটানে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁকে বলতে শোনা যায় ,’ কর্মজীবনে সত্যিই কি আমি কিছু করতে পেরেছি ? আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে পারছি কিনা তাও আমায় ভাবায়। ইতিহাসে কিভাবে বর্ণিত থাকবে আমার কর্মজীবন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি।’ প্রসঙ্গত, বিচারপতির চন্দ্রচূড়ের বাবা ওয়াইভি চন্দ্রচূড়ও ভারতের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দেশের সবথেকে দীর্ঘ সময়ের প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি। দুজনের তরফ থেকেই উল্লেখযোগ্য রায় পেয়েছে ভারতবাসী।