কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার অনুমতি দিলেন রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলট। মহীশূর আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অধীনে জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে এবার মামলার মুখোমুখি হতে চলেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রদীপ কুমার, টিজে আব্রাহাম, এবং স্নেহামাভি কৃষ্ণা নামক তিন সমাজকর্মীর পিটিশনের ভিত্তিতেই ‘মুদা’ দুর্নীতির তদন্তে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল।রাজ্যপালের সেক্রেটারিয়েটের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৮৮-র ১৭ ধারা এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ২১৮ ধারার অধীনে সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ জুলাই, টিজে আব্রাহাম মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি চেয়ে রাজ্যপালের কাছে আবেদন করেছিলেন। এর ভিত্তিতে আগেই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফেও এই বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এই দুর্নীতির অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে জানিয়েছিলেন।
সম্প্রতি জমি বণ্টন দুর্নীতির অভিযোগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়ার স্ত্রী পার্বতী এবং শ্যালক মল্লিকার্জুনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ করেন স্নেহামাভি কৃষ্ণা নামে এক সমাজকর্মী। তাতে বলা হয়, ‘মুডা’ জমি বেআইনি ভাবে বিলি করা হয়েছে। জেলাশাসক, ভূমি দফতরের আধিকারিকের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী এবং শ্যালকও সেই দুর্নীতিতে জড়িত।’
স্নেহামাভির দাবি ছিল, মল্লিকার্জুন জমির জন্য জাল নথিপত্র পেশ করেছেন ‘মুডা’র দফতরে। অন্যদিকে, পার্বতীকেও বেআইনি ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বহুমূল্য জমির মালিকানা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে কর্নাটকের রাজ্যপাল, মুখ্যসচিব এবং রাজস্ব বিভাগের প্রিন্সিপাল সচিবকে চিঠিও লেখেন ওই সমাজকর্মী। এ বার সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল।
এর আগে কর্ণাটকের রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলট মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং কেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত নয়, তা নিয়ে সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে। কিন্তু জবাব দেওয়ার বদলে রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যপালকে তদন্তে অনুমতি না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রস্তাবনা আনা হয়। রাজ্যপাল ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ আনা হয়।
২০২১ সালে মুডা উন্নয়নের জন্য মহীশূরের কেসার গ্রামে সিদ্দারামাইয়ার স্ত্রী পার্বতীর কাছ থেকে তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এর বিনিময়ে তাঁকে দক্ষিণ মহীশূরের নামজাদা এলাকা বিজয়নগরে জমি দেওয়া হয়। বিজয়নগরের জমির দাম তাঁদের জমির তুলনায় অনেক বেশি ছিল। মুডা কর্তৃক এসব জমি বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিদ্দারামাইয়া, তাঁর স্ত্রী, ছেলের বিরুদ্ধে মুডা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর অবশ্য এজন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘তড়িঘড়ি নির্দেশ দেওয়াতে এটা স্পষ্ট যে রাজ্যপালের উপর কেন্দ্রের চাপ ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সবাই সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে আছি।’’