• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

অযোধ্যায় রামমন্দির সংলগ্ন এলাকা জুড়ে জমি কেনার ধুম, তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব থেকে আমলারা  

অযোধ্যা, ১০ জুলাই – অযোধ্যায় রামমন্দির সংলগ্ন এলাকা জুড়ে কেনা বেচা হয়েছে ২৫টি গ্রামের আড়াই হাজার জমি। রামজন্মভূমি অযোধ্যা এখন জমিপিপাসুদের গ্রাসে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই কেনাবেচায় জড়িয়ে রয়েছেন রাজনীতিক থেকে শুরু করে আমলা-আইপিএস এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা।তালিকায় নাম রয়েছে অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী,  উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার অধিকর্তা, মহিলা কুস্তিগিরদের ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন

অযোধ্যা, ১০ জুলাই – অযোধ্যায় রামমন্দির সংলগ্ন এলাকা জুড়ে কেনা বেচা হয়েছে ২৫টি গ্রামের আড়াই হাজার জমি। রামজন্মভূমি অযোধ্যা এখন জমিপিপাসুদের গ্রাসে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই কেনাবেচায় জড়িয়ে রয়েছেন রাজনীতিক থেকে শুরু করে আমলা-আইপিএস এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা।তালিকায় নাম রয়েছে অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী,  উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার অধিকর্তা, মহিলা কুস্তিগিরদের ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের এমপি-পুত্র থেকে দলমতনির্বিশেষে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।  এঁদের সকলের হাতেই রয়েছে রামলালা রাজ্যের জমির দলিল।

প্রোমোটারদের দাপটে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন স্থানীয় খেতমজুর থেকে কৃষিজমির মালিক সকলেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু ছিল রামমন্দির। তাই অযোধ্যার জমি নিয়ে রাজনৈতিক দরাদরি কম হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেই জমি নিয়ে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে ওঠে।  যদিও  গেরুয়া শিবিরের এই অস্ত্র অবশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় ভোটের ফলাফলে। অযোধ্যা বিধানসভা কেন্দ্রসহ ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে জয়ী হন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী।

জানুয়ারি মাসে রামমন্দির উদ্বোধনের পর থেকে অযোধ্যার জমি থেকে সোনা বেরতে শুরু করে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বিস্তীর্ণ এলাকা জমি ব্যবসার খনিতে পরিণত হয়। ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ একটি অন্তর্তদন্তমূলক সংবাদে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রামমন্দির সংলগ্ন অন্তত ২৫টি গ্রামে জমি কেনাবেচা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

মন্দিরের ১৫ কিমি ব্যাসের মধ্যে অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী গোন্ডা ও বস্তি জেলায় এভাবেই জমি কেনাবেচা হয়েছে। এর বেশিরভাগই ঘটেছে রাজনীতিক ও সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নামে অথবা তাঁদের আত্মীয়দের নামে। অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী চাওনা মিন। তাঁর দুই ছেলে চাউ কান সেং মিন এবং আদিত্য মিন ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ৭২ লক্ষ টাকায় ৩.৯৯ হেক্টর জমি কিনেছিলেন। জায়গাটি মন্দির থেকে ৮ কিমি দূরে সরযূ নদীর তীরে গোন্ডার মহেশপুরে। ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁরা ৯৮ লক্ষ টাকায় মাত্র ০.৭৬৮ হেক্টর জমি বেচে দেন। 

 

বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ব্রিজভূষণের এমপি-পুত্র করণভূষণ সিং। নন্দিনী ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মালিক করণ মহেশপুরে গতবছর জানুয়ারিতে ০.৯৭ হেক্টর জমি কিনেছিলেন। দাম পড়েছিল ১.১৫ কোটি টাকা। ওই বছরেরই জুলাই মাসে এর মধ্য থেকে মাত্র ৬৩৫.৭২ বর্গফুট বেচেছেন ৬০.৯৬ লক্ষ টাকায়।

 

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এসটিএফ প্রধান অতিরিক্ত ডিজিপি অমিতাভ যশ।  তাঁর মা গীতা সিং মহেশপুর, দুর্গাগঞ্জ ও অযোধ্যার যদুবংশপুরে ৯.৯৫৫ হেক্টর কৃষিজমি কিনেছিলেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। মন্দির থেকে জমিগুলি ৮ থেকে ১৩ কিমি দূরত্বে। মোট খরচ পড়েছিল ৪.০৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি এর থেকে মাত্র ০.৫০৫ হেক্টর বেচে দেন ২০.৪০ লক্ষ টাকায়। এ বিষয়েও পুলিশ কর্তা কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধিকে।

 

এই তালিকায় রয়েছেন আরও তাবড় নেতাসমূহের নাম। আলিগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইপিএস পলাশ বনসলের বাবা প্রাক্তন আইপিএস  ঈশ্বর কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে দিল্লি পুরসভা ও বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমেঠির পুলিশ সুপার আইপিএস অনুপকুমার সিংয়ের জামাই যৌথভাবে ৪ হেক্টর কৃষিজমি কিনেছিলেন। বিজেপি বিধায়ক অজয় সিংয়ের ভাই ও ভাইপো, গোঁসাইগঞ্জ নগর পঞ্চায়েত প্রধান বিজেপির বিজয়লক্ষ্মী জয়সওয়ালের আত্মীয়,  বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বিজেপির কয়েকজন প্রাক্তন বিধায়কও এই জমি কেনাবেচার  তালিকায় আছেন। শুধু রাজনীতিক বা সরকারি আধিকারিকরা নন, কর্পোরেট দুনিয়াও এখন তাকিয়ে আছে অযোধ্যায় জমি কেনার আশায়। আদানি গ্রুপ থেকে অভিনন্দন লোধা সবাই এই তালিকাভুক্ত ।