ইডির দফতরে ভার্চুয়াল হাজিরা কেজরিওয়ালের, বিধানসভায় আস্থা ভোটে জয়ী আপ 

দিল্লি, ১৭ ফেব্রুয়ারি – অবশেষে ইডির কাছে হাজিরা দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে সশরীরে নয়, ভার্চুয়ালি হাজিরা দিয়েছেন তিনি। ইডির আবেদনের ভিত্তিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির বিশেষ আদালত। কেন তিনি বারবার হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন তার কারণও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও কেজরিওয়াল এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা দেন।শনিবার সকালে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে ইডির কাছে হাজিরা দেন। 

এদিকে দিল্লি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য শনিবার দুপুরে আস্থাভোটের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি  নিজেই আস্থাভোটের ডাক দেন। দিল্লি বিধানসভায় আস্থা ভোটে জয়ী হয় আপ।
 
দিল্লির আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় ইডির তলব পাঁচবার এড়িয়েছিলেন কেজরিওয়াল। কোন না কোন কারণ দেখিয়ে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যান।পঞ্চমবার ইডির সমন এড়ানোর পর ইডি তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়। এদিন হাজিরা দেওয়ার আগে কেজরিওয়ালের আইনজীবীরা আদালতে জানান, দিল্লি বিধানসভায় আস্থা ভোট নিয়ে আলোচনা চলছে , বাজেট অধিবেশনও আছে। তাই কেজরিওয়াল ইডির কার্যালয়ে যেতে পারবেন না। তিনি ভার্চুয়ালি হাজিরা দিতে পারবেন। শনিবার আদালত তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি হাজিরা দেন।
 
আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডির তরফে ষষ্ঠ বার সমন পাঠিয়ে কেজরিওয়ালকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ইডি দফতরের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজিরা দিয়ে কেজরী জানান, দিল্লি বিধানসভায় আস্থাভোট থাকার কারণে তিনি সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে পারছেন না। আদালত তাঁকে আগামী ১৬ মার্চ সশরীরে আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের ‘ছাড়পত্র’ কে হাতিয়ার করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইডির ষষ্ঠ সমনও এড়িয়ে যাবেন বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন।
 
এদিন কেজরিওয়ালের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রমেশ গুপ্ত।  তিনি বিচারককে জানান, এর পরের বার তলব করলে কেজরিওয়াল সশরীরে ইডির কার্যালয়ে যাবেন।  এই মামলার পরবর্তী  শুনানি ১৬ মার্চ।  ওই দিন সশরীরে পাতিয়ালা কোর্টে হাজিরা দেবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। 
 
এদিকে, শনিবার দিল্লি বিধানসভায় আস্থাভোট রয়েছে। শুক্রবারই হঠাৎ এই আস্থাভোট ঘোষণা করেন কেজরিওয়াল। আপ সূত্রে জানানো হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি দিল্লি সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।  তিনি জানান, বিজেপি আপ বিধায়কদের একাংশকে কিনে তাঁর সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। ৭ জন বিধায়ককে ২৫ কোটি টাকা করে টোপ দিয়েছে বিজেপি। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতেই এবং সরকারের স্থায়িত্ব আগামী ৬ মাসের জন্য নিশ্চিত করতে এই আস্থাভোটের ডাক দিয়েছেন কেজরিওয়াল।
 

৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। বিজেপির রয়েছে মাত্র ৮ জন বিধায়ক, আপের ৬২। এই পরিস্থিতিতে ২৮ জন আপ বিধায়ককে দলে টানা বিজেপির পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছে রাজনীতিবিদদের একাংশ।

শুক্রবারই আস্থা ভোটের প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এদিন আম আদমি পার্টির ৬২ জন বিধায়কের মধ্যে ৫৪ জন আস্থা ভোটে উপস্থিত ছিলেন। ধ্বনি ভোটে গৃহীত হয় ভোট। প্রত্যাশামতো ভোটে জয়ী হয় কেজরিওয়ালের দল।


সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আস্থা ভোট কেন এর জবাবে কেজরিওয়ালের মন্তব্য, ”কক্ষে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবুও আস্থা ভোট দরকারি, কারণ  বিজেপি আপ বিধায়কদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।” প্রসঙ্গত, কেজরিকে এর আগে বলতে শোনা যায়, তাঁর কাছে দুই আপ বিধায়ক আগেই অভিযোগ জানিয়েছেন, বিজেপির তরফে  দলীয় প্রতিনিধিদের টাকার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”ওঁরা বিধায়কদের ২৫ কোটি টাকার টোপ দিয়েছেন বিজেপিতে যোগ দিতে। পরে আমরা খোঁজ করে দেখেছি, ২১ নয়, ৭ জন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিজেপি।”

এদিন দিল্লি বিধানসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন কেজরিওয়াল। তাঁর কটাক্ষ, ‘রামভক্ত’  বিজেপি হাসপাতালে গরিব মানুষদের ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ”যদি এবার বিজেপি জিতেও যায়, ২০২৯ সালে আপ দেশকে বিজেপিমুক্ত করবেই।”