দিল্লি, ১০ ফেব্রুয়ারি – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার আম আদমি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল একলা চলার নীতি ঘোষণা করলেন। শনিবার তিনি স্পষ্ট বলেন, পাঞ্জাব এবং চণ্ডীগড় লোকসভা নির্বাচনে আপ একলা লড়বে। ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে কোনও আসন ভাগাভাগি হবে না। লোকসভা নির্বাচনের আগে আম আদমি পার্টির এই ঘোষণায় বড় ধাক্কা খেল ইন্ডিয়া জোট। পাঞ্জাবে ঘর ঘর রেশন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে লোকসভা নির্বাচনে একা লড়ার কথা জানান কেজরিওয়াল। এদিন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ পাঞ্জাবের ১৩টি আসনেই একা লড়বে আম আদমি পার্টি। চণ্ডীগড়ের একটি আসনে প্রার্থী দেবে আপ।”
বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে নির্বাচিত করার জন্য পাঞ্জাবের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, “আজ থেকে ২ বছর আগে আপনারা আমাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। ১১৭টি আসনের মধ্যে ৫২টি আসনেই জয়ী করেছিলেন আমাদের। পাঞ্জাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আজ আপনাদের কাছে হাতজোড় করে আরেকবার আশীর্বাদ চাইছি। দুই মাস পর লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। পঞ্জাবে ১৩টি আসন রয়েছে, চণ্ডীগঢ়ে ১টি আসন রয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে আম আদমি পার্টি এই ১৪ আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, ২ বছর আগে আমরা যেমন আশীর্বাদ দিয়েছিলেন, তেমনই এই ১৪টি আসনেও আশীর্বাদ দিতে হবে। ১৪ টি আসনেই জয়ী করতে হবে আপকে, ঝাড়ু চিহ্নে ভোট দিন। আপনারা আমাদের হাত যত শক্ত করবেন, ততই আমরা আপনাদের জন্য আরও কাজ করতে পারব। “ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা ইন্ডিয়া জোটে বড়সড় ধাক্কা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করেছিল কংগ্রেস এবং আপ। কিন্তু লোকসভায় পাঞ্জাবে কোনও জোট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় খারিজই করে দিলেন আপ প্রধান । জানিয়ে দিলেন, শীঘ্রই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে ।
এর আগে সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, কংগ্রেস এবং আপ নেতাদের মধ্যে জোটের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি হরিয়ানার একটি সভা থেকেও তেমনই ইঙ্গিত দেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেছিলেন, “লোকসভা ভোট আসছে। আপনারা জানেন যে, আমরা দেশের সাধারণ নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠন করেছি। তাই আমরা জোটের শরিক দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়া করেই নির্বাচনে লড়ব।” অবশ্য তারও কিছু দিন আগে আপশাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আগামী লোকসভা ভোটে পাঞ্জাবের ১৩টি আসনেই একক শক্তিতে লড়তে চান তাঁরা।
এদিকে এর আগে ‘একলা চলো’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাংলায় কোনও জোট নয়, ৪২টি আসনেই একলা লড়বে তৃণমূল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয় এই বার্তা স্পষ্ট করেছেন মমতা। তাঁর দাবি, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল, তবে সিপিএমের জন্যই যাবতীয় সমস্যা হয়েছে। এদিকে, বামফ্রন্টও বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্ন নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, লোকসভায় হাত শিবির ৪০টি আসন পাবে না বলেই মনে করছেন তিনি। এমনকী, লোকসভায় উত্তর প্রদেশ থেকে বিজেপিকে হারানোর চ্যালেঞ্জ রেখেছেন কংগ্রেসের সামনে।
বিজেপি-র মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, ‘ ইন্ডিয়া জোটের কফিনে আরও একটি পেরেক। নো মিশন, নো ভিশন। ইন্ডিয়া জোটের পরিকাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রারও আর কোনও অর্থ নেই। ওঁর উচিত ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা না করে এবার দেশে ইন্ডিয়া জোট জোড়ো যাত্রা করা। সবদিক থেকেই ওঁরা বিভ্রান্ত।’
বিভিন্ন রাজ্যে আসন বোঝাপড়া নিয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে মতান্তরের বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ইতিমধ্যেই বিরোধী জোট ছেড়ে বিজেপির এনডিএ জোটে নাম লিখিয়েছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। এনডিএ-তে শামিল হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরিও। এর মধ্যেই পাঞ্জাবে বিরোধী জোটের একসঙ্গে ভোটে লড়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল ।