কাঠুয়া কাণ্ডে ৮ বছরের কিশােরীকে ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে খুনের অপরাধে ৮ অভিযুক্তের মধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। একজনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে।
ঘটনার প্রায় ১৭ মাস পরে এই রায় দিল পাঠানকোটের আদালত। সাঞ্জি রামের ছেলে বিশাল জাঙ্গগােত্রকে সংশয় ও সন্দেহের অবকাশে আদালত তাকে অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী মুবিন ফারুকি।
জম্মু ও কাশ্মীরের অপরাধ দমন শাখা এক নাবালক সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। ৮ অভিযুক্তের মধ্যে একজন নিজেকে নাবালক দাবি করে তার অভিযােগের শুনানি বিশেষ আদালতে করার আবেদন জানিয়েছে। জেলা ও নগর দায়রা আদালতের বিচারক তেজবিন্দর সিং এক-এক করে প্রত্যেক অভিযুক্তের বয়ান শােনেন। কারণ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা অভিযােগ ছিল।
৩ জুন শেষ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। জানা গিয়েছে, দোষীদের মধ্যে রয়েছে পুলিশ অফিসার দীপক খাজুরিয়া, পরবেশ কুমার এবং মন্দিরের পুরােহিত সাঞ্জি রাম। এই সঞ্জি রামই ছিল কাঠুয়ার নৃশংস ঘটনার অন্যতম পাণ্ডা। বাকি দোষীদের নাম সাব ইন্সপেক্টর আনন্দ দত্ত, হেড কনস্টেবল তিলক রাজ এবং সুরিন্দর।
দোষীদের মধ্যে ৩ জনকে আজীবন কারাবাস, মাথাপিছু ১ লক্ষ টাকা জরিমানার সঙ্গে গণধর্ষণের জন্য ২৫ বছরের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্য ৩ জন দোষীকে ৫ বছরের কারাবাস এবং ৫০ হাজার জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অনাদায়ে ৬ মাস অতিরিক্ত জেল হেফাজতের সাজা শুনিয়েছে আদালত।
গত ৩ জুন পাঠানকোটের বিশেষ আদালতে সাক্ষ্যদানের প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর ১০ জুন রায় দানের দিন ঘােষণা করেন সদর দায়রা আদালতের বিচারপতি তেজবিন্দর সিং। ঘােষণা অনুযায়ী আজ সকালে ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। এক অভিযুক্ত বিশালকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। আরেক জনের বয়স নিয়ে বিতর্ক থাকায় তাকে বিচারপ্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে সে নাবালক কিনা, তা খতিয়ে দেখবে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট। তারপর তাকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, তা ঠিক করা হবে।
বাকি ৬ জন দোষীর বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন এবং তথ্য প্রমাণ লােপাটের অভিযােগে চার্জশিট জমা পড়েছে। আইনজীবী মহল মনে করছে, এই ৬ জন দোষী ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা এবং সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেতে পারেন।
এদিন সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে পাঠানকোটের বিশেষ আদালত চত্বর। কোনওরকম অশান্তি এড়াতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যে সমস্ত ধারায় চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতে ফাঁসির সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে আইনজীবী মহলের একটা বড় অংশ।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি এক ভয়ঙ্কর খবরে কেঁপে গিয়েছিল গােটা দেশ। উদ্ধার হয়েছিল ৮ বছরের কিশােরীর একেবারে ক্ষতবিক্ষত দেহ। জানা গিয়েছে, জম্মুর কাছে কাঠুয়া জেলায় একটি মন্দিরে চারদিন (১০ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি) ধরে আটকে রাখা হয়েছিল ওই বালিকাকে। চলেছিল লাগাতার ধর্ষণ। সঙ্গে নির্মম অত্যাচার। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল মেয়েটিকে।
পুলিশ জানিয়েছিল, মাদক খাইয়ে বেহুশ করে কিশােরীর ওপর চারদিন লাগাতার অত্যাচার চালানাে হয়েছিল। ঘটনার তিনদিন পর ১৭ জানুয়ারি উদ্ধার হয় মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মেয়েটিকে ওই ক’দিন খেতেও দেওয়া হয়নি। পরে শ্বাসরােধ করে খুন করা হয় তাকে। মারা যাওয়ার পর দেহ যাতে চিনতে না পারা যায়, সেজন্য পাথর দিয়ে র্থেতলে দেওয়া হয়েছিল তার মুখ। এই নৃশংস ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল সারা দেশ।
পরবর্তী সময় এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাঠুয়ার ওই মন্দিরের পুরােহিত, এক প্রাক্তন সরকারি অফিসার, তার ছেলে, ভাইপাে এবং চার পুলিশকর্মী সহ মােট আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে এই ঘটনার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ লােপাটের অভিযােগও ওঠে।