বেনজির ঘটনার সাক্ষী রইল সংসদ। ওয়াকফ বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চরম বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত। বিজেপি সাংসদ অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুমুল বাগবিতন্ডার জেরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে টেবিলে থাকা কাচের জলের বোতল ভেঙে আহত হন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে চোট লেগে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে।
এদিন দিল্লিতে ওয়াকফ বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও। বৈঠক শুরু হওযার পর সবকিছু শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু পরে দুজনের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে থাকেন। এই ঘটনার জেরে কিছুক্ষণের জন্য বৈঠক বন্ধ হয়ে যায়। তর্কাতর্কির জেরে মেজাজ হারান শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান , আচমকাই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কাচের বোতল তুলে টেবিলের ওপর আছড়ে ভেঙে ফেলেন। তাঁর হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে।
ওয়াকফ বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির-র বৈঠকে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার তরজা চলছিলই । মঙ্গলবারের বৈঠকেও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। এরপর অশান্তির জেরে কাচের গ্লাস ভেঙে কল্যাণের হাতে ঢুকে যায়। বৈঠকের শেষে দেখা যায় আহত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরে বাইরে নিয়ে আসছেন ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ তথা মিম-এর সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।সঙ্গে ছিলেন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংও। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবার এঁদের সঙ্গে কল্যাণকে বৈঠকে ফিরে যেতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত ওয়াকফ বিল নিয়ে চর্চা চলছে গত বেশ কয়েকদিন ধরে। বিজেপি ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই বিল সংবিধানের পরিপন্থী। এর ফলে একদিকে যেমন মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে তেমনই তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেও হিতকর নয়। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এসপি, মিম— প্রায় সব ক’টি বিরোধী দলই আপত্তি জানায়। বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হৈ হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ আগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। দীর্ঘ বিতর্কের পর ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।
বিলে রয়েছে, আগামী দিনে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। ওই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে জেলাশাসকদের হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ, নতুন আইনে যাবতীয় ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে চলে যাবে। এর ফলে জেলাশাসক ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের থেকেও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন। ফলে যাবতীয় গুরুত্ব হারাবে ওয়াকফ বোর্ড।
এর আগেও ওয়াকফ বিল নিয়ে জেপিসির বৈঠকে গন্ডগোল হয়েছে। গত সপ্তাহেও এই ঘটনা ঘটে। তখন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। বিরোধী সাংসদরা বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। বিরোধী সাংসদদের অভিযোগ, সেই সময় চেয়ারপার্সন জগদম্বিকা পাল বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। পাল্টা বিজেপি সাংসদদের অভিযোগ, বিরোধী সাংসদরা তাঁদের লক্ষ্য করে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন।