ন্যায়বিচার প্রতিশােধমূলক কিংবা তাৎক্ষণিক হতে পারে না : প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে

প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে। (File Photo by Handout / Indian Presidency / AFP)

ন্যায়বিচার কখনও প্রতিশােধমূলক হয় না কিংবা ন্যায়বিচার কখনও তাৎক্ষণিকও সম্ভব নয়। বিচার ব্যবস্থাকে এড়িয়ে কোনও অপরাধের জন্য অভিযুক্তকে হত্যা করার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে। 

শনিবার যােধপুরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান চিারপতি বলেন, এভাবে বিচার ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অভিযুক্তকে হত্যা করা হলে ন্যায় বিচার তার চরিত্র হারাবে। তেলেঙ্গানায় গণধর্ষণের অভিযােগে অভিযুক্ত চারজনকে পুলিশ ভােররাতে এনকাউন্টারে গুলি করে হত্যা করেছিল। এই নিয়ে গােটা দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন পুলিশ সঠিক কাজই করেছে, আবার কারওর কারওর মত ভিন্ন। তাঁরা এভাবে বিচার হওয়ার আগে অভিযুক্তদের মেরে ফেলাকে সমর্থন করছেন না। এই বিতর্কের মাঝে প্রধান বিচারপতির উক্ত মন্তব্য প্রণিধানযােগ্য। 

বিচারপতি বোবড়ে এদিন বলেন, ন্যায় বিচার তাঁর মতে কোনও তাৎক্ষণিক ঘটনা হতে পারে না। ন্যায়বিচার এমন হতে হবে, যা কখনও প্রতিশােধমূলক বলে প্রতীত না হয়। যখন ন্যায় বিচার প্রতিশােধ গ্রহণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে তখন সেটা আর ন্যায়বিচারের পর্যায়ে পড়ে না। 


শনিবার যােধপুরে রাজস্থান হাইকোর্টের নতুন ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান বিচারপতি। গত মাসে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের অবসর নেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন এস এ বোবড়ে। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি স্বীকার করে নেন যে, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অনেক ভুলত্রুটি আছে, যার অবিলম্বে সংশােধন প্রয়ােজন। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ফৌজদারি মামলায় বহু সময় শিথিলতা বা ঢিলেমি দেখা যায়। তা ছাড়া ফৌজদারি মামলায় রায়দানেও কখনও কখনও বিলম্ব ঘটে। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়ােজন বিচার ব্যবস্থাকে উন্নত করতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প পথের সন্ধান করা। তাহলেই মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি বোবড়ে। 

আইনজ্ঞ মহলের ধারণা হায়দরাবাদে একটি মহিলা ডাক্তারের গণধর্ষণের প্রেক্ষিতে জনরােষ শান্ত করতে পুলিশ এনকাউন্টারে চারজন অভিযুক্ত মেরে ফেলেছিল, সেই ঘটনা মেনে নিতে পারেননি দেশের প্রধান কিারপতি।

তাই বিচারপতি বোবড়ে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন ঠিক পুলিশি এনকাউন্টারের পরদিনই। হায়দরাবারে গণধর্ষণের অভিযুক্তদের পুলিশের গুলিতে মৃত্যুকে ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনমত কিন্তু আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। এমনকি, জনরােষের সামনে পড়ে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়ালকে পর্যন্ত বলতে হয়েছে এনকাউন্টারে হত্যার ঘটনা কড়া বার্তা পৌঁছে দেয় সেই সব অপরাধীদের কাছে, যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে ভয় পায় না। বিশেষ করে এমন এক সময় যখন ধর্ষণের বহু মামলা দেশের আদালতগুলিতে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আটকে রয়েছে তবুও অন্যরা আবার পুলিশ এনকাউন্টারে গণধর্ষণের অভিযুক্তদের এভাবে মেরে ফেলাকে সমর্থন করতে পারছেন না কারণ তাদের মতে সেটা ন্যায় বিচার নয়। আদালতে তাদের বক্তব্য শােনার কোনও সুযােগই দেওয়া হয়নি।

এদিকে পুলিশের বক্তব্য হল গণধর্ষণের চারজন অভিযুক্ত তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে পালানাের চেষ্টা করছিল বলে তাদের পুলিশ গুলি করেছিল যার ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে এই ঘটনার বিশদ তদন্ত চেয়ে মামলা হয়েছে।