বেড়াতে গিয়ে রহস্যমৃত্যু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের। উত্তরাখণ্ডে হোটেলের বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল অধ্যাপক মৈনাক পালের রক্তাক্ত দেহ। দুই বন্ধুর সঙ্গে আলমোড়া বেড়াতে গিয়েছিলে মৈনাকবাবু। ঘরের দরজা ভেঙে ওই অধ্যাপকের দেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হল তা এখনও জানা যায়নি।
শনিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল অধ্যাপকের। হোটেল থেকে চেক আউট করার কিছুক্ষণ আগেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বরাবরই পাহাড় ভালবাসতেন মৈনাকবাবু। তাঁর ফেসবুক পেজজুড়ে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার ছবি। সেই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে মৈনাকবাবুর রহস্যমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য জানিয়েছেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডে ঘুরতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তবে সেগুলোর অধিকাংশই দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু – কখনও খাদে বাস পড়ে, আবার কখনও বা ট্রেকিং করতে গিয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এভাবে বন্ধ ঘর থেকে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা বিরল। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অধ্যাপকের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন আধিকারিকরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাই মৈনাকবাবুর বন্ধুরা দীর্ঘক্ষণ তাঁকে ডাকাডাকি করছিলেন। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ পৌঁছে হোটেলের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তখন দেখা যায়, ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মৈনাক পালের দেহ। এটি আত্মহত্যা না খুন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃত্যুর আসল কারণ জানতে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
৪৪ বছরের ওই অধ্যাপকের দেহ লালকুঁয়া শহরের একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয়েছে। হোটেলে রিসেপশনে মৈনাকবাবুর বাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয়, তিনি ফোন ধরছেন না। এরপর রিসেপশনের লোকেরা গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। শৌচালয় থেকে মৈনাকবাবুর দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায় এবং হাতে গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
শনিবার বাগ এক্সপ্রেসে তাঁর কলকাতা ফেরার কথা ছিল। স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালে মৈনাকবাবুর ময়নাতদন্ত হয়। দেহটি কলকাতা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বরাবরই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন মৈনাকবাবু। ২০০২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক পাস করেন তিনি, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টও হন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হন। ২০০৪ সালে যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। যাদবপুর থেকেই এমফিল এবং পিএইচডি করেছিলেন।
২০০৯ সালে পিএসসি দিয়ে সরকারি অধ্যাপক হিসেবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে নিযুক্ত হন মৈনাক পাল। এরপর মেজিয়া গভমেন্ট ডিগ্রি কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দেন তিনি। দীর্ঘ।৭ বছর কাজ করার পর.২০২২ সালে অ্যাসোসিয়ে প্রফেসর হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেন তিনি। প্রতিদিন বনহুগলি থেকে যাদবপুরে যাতায়াত করতেন তিনি।
এদিকে মৈনাকবাবুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন মৈনাক পাল। তাঁর প্রয়াণে পড়ুয়া, অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।