মুম্বই, ১৭ জুলাই – উত্তরপ্রদেশের হাথরসে পদপিষ্টের ঘটনার দগদগে স্মৃতি ফিকে না হতেই ফের সংবাদের শিরোনামে বাণিজ্য নগরীর ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। এয়ার ইন্ডিয়ার চাকরির ইন্টারভিউতে পরীক্ষা নেওয়ার নামে চূড়ান্ত অব্যবস্থার কারণে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মঙ্গলবার । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুম্বই বিমানবন্দরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এয়ার ইন্ডিয়ার অপদার্থতা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ওঠে। সূত্রের খবর, এয়ার ইন্ডিয়ার চাকরির ইন্টারভিউতে ৬০০ শূন্যপদের জন্য ইন্টারভিউতে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী। কে আগে ঢুকবে তা নিয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যার জেরে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় মুম্বই বিমানবন্দরে। এই ঘটনার যে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে আবেদনকারীরা ফর্ম সংগ্রহের জন্য একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছেন। দীর্ঘক্ষণ খাবার ও পানীয় ছাড়া তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। যে কারণেই লাইনে দাঁড়িয়েই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাশাপাশি হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। হাজার হাজার আবেদনকারীদের বিশাল ভিড়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা।
সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেড মুম্বই বিমানবন্দরে ‘মালবাহক’ বা ‘লোডার’ পদের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। চাকরির জন্য সরাসরি যোগাযোগের কথা ছিল বিজ্ঞাপনে। সামান্য বেতনের এবং শিক্ষাভিত্তিক কম মর্যাদার এই কাজের পরীক্ষাতেও হাজার হাজার কর্মপ্রার্থী জড়ো হন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পদপিষ্ট হওয়ার জোগাড় হয়। সূত্রের খবর, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। বিমানবন্দরের লোডার পদের কর্মীরা মূলত বিমানে মালপত্র তোলা এবং নামানোর পাশাপাশি ব্যাগেজ বেল্ট এবং র্যাম্প ট্র্যাক্টর, বিমানের খাবার ইত্যাদি নানান বিষয় তদারকি করে থাকেন। আর সেই কাজের জন্য উচ্চ শিক্ষিতরাও আবেদন করেন বলে খবর। যেখানে বিএ,এমএ, পিএইচডি করা ছাত্ররা যেমন রয়েছেন তেমনি ছিলেন বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের টপারও।
কোনও বিমান সংস্থায় ‘লোডার’ দের শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ডের থেকেও শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি বিমানের জন্য কমপক্ষে পাঁচজন লোডার প্রয়োজন হয়। এই কাজের জন্য ২০,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকা মাসিক বেতন দেওয়া হয়। যদিও ওভারটাইম ভাতার সঙ্গে বেশিরভাগ কর্মী ৩০,০০০ টাকার বেশি উপার্জন করতে পারেন । এই চাকরি পাওয়ার আশায় কেউ ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। কেউ বা আবার রাজস্থানের অলওয়ার থেকে পৌঁছে যান মুম্বইয়ে। চাকরি পাওয়ার জন্য ডিগ্রিধারীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিযোগ, আবেদনকারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। শুধু তাই-ই নয়, খাবার, পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না বলেও অভিযোগ।
আবেদনকারীদের মধ্যে একজন বলেন,’ চাকরির জন্য এসেছিলাম। ওরা মাসে ২২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের কথা লিখেছিল।’ তাঁকে সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন, চাকরি পেলে কি আপনি পড়াশোনা ছেড়ে দেবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কী করব? দেখতে পাচ্ছেন না চারিদিকে কত বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে! সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, দয়া করে চাকরি সুযোগ বাড়ান, না হলে না খেয়ে মরতে হবে।’
বিএ পাশ আরেক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘আমি জানিও না কাজটা কী। কিন্তু, আমার এখনই একটা চাকরি চাই।’
ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার ও জল ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকায় বহু যুবক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শেষে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিয়োগকারীরা চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনপত্র জমা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন।
এই ঘটনার নিন্দা করে বিরোধীরা বলেন, এটাই ৩.০ মোদি সরকার। ‘অচ্ছে দিন’ -এর আসল পরিচয় দেশবাসী দেখছে। বেকারত্ব সমস্যা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে তা জানতে অপেক্ষা করছে দেশবাসী। উল্লেখ্য, মুম্বইয়ের এই ঘনার কয়েকদিন আগে গুজরাটের ভারুচ জেলার আঁকলেশ্বরে একটি ওয়াক-ইন ইন্টারভিউতে শত শত চাকরি প্রার্থীর ধাক্কাধাক্কির ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানির ১০টি পদের জন্য প্রায় ১,৮০০ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।জখম হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন প্রার্থীও।