শ্রীনগর, ১২ জুন – জম্মু-কাশ্মীরে পুণ্যার্থীদের বাসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু এই হামলার ঘটনায় যুক্ত এক জঙ্গির ছবি প্রকাশ্যে আনল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের খোঁজ দিতে পারলে মিলবে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার। জঙ্গিদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই ঘটনায় জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছিল লস্কর-ই-তৈবার শাখা সংগঠন।
গত রবিবার, জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরে যাওয়ার সময় পুণ্যার্থীদের বাসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মৃত্যু হয় ১০ জনের। আহত হন প্রায় ৪০ জন। উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছিলেন । পুণ্যার্থী বোঝাই বাসটি জম্মুর শিবখড়ি মন্দির থেকে কাটরায় বৈষ্ণো দেবীর মন্দিরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। সেই সময় বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা।
বাসে জঙ্গি হামলার তদন্তভার ইতিমধ্যেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একই সঙ্গে তদন্ত চালাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশও। এক পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী এক জঙ্গির স্কেচ তৈরী করা হয়েছে। সেই স্কেচ প্রকাশ করেছে পুলিশ।
এই হামলার দায় ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবার শাখা সংগঠন। এটাও মনে করা হচ্ছে, গত মাসে রাজৌরি এবং পুঞ্চ এলাকায় হামলার ঘটনাতেও যুক্ত ছিল এই জঙ্গিরা। পুণ্যার্থীবোঝাই বাসটিকে ঘিরে ফেলেছিল জঙ্গিরা । এরপর ছয় থেকে সাত জন জঙ্গি বাস লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু করে। চালক গুলিবিদ্ধ হতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি যাত্রীসহ খাদে গড়িয়ে পড়ে যায়। সোমবার ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন এনআইএ আধিকারিকেরা।
জঙ্গিদের খুঁজে বার করতে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হচ্ছে। কাছের জঙ্গলে জঙ্গি ডেরা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি-র একটি দলও এই অভিযানে যোগ দিয়েছে। এলাকায় এলাকায় চলছে নাকাতল্লাশি।
এদিকে এই ঘটনার তদন্তের মাঝেই মঙ্গলবার রাতে জম্মু-কাশ্মীরে জোড়া জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ডোডা জেলার সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার আগে কাঠুয়া জেলার হিরানগরীতে এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে গুলি চালায় একদল জঙ্গি। পর পর জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় অস্বস্তিতে প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাতে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডায় একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পাল্টা জবাব দেয় সেনাবাহিনীও। পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে জঙ্গি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বন্দুকের লড়াই চলছে। শেষ পাওয়া খবরে দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে ৫ জন সেনা এবং আধিকারিক আহত হয়েছেন। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ‘ডোডার ছত্তরগলা এলাকায় সেনা ও পুলিশের যৌথ চেক পয়েন্টে জঙ্গি হামলা হয়। এখনও সেখানে গুলির লড়াই চলছে।’
জানা গেছে, সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা পাহাড়ের ওপরের দিকে পালিয়ে যায়। তবে যৌথ বাহিনীর জওয়ানরা জঙ্গিদের পিছু নেয়। জঙ্গিদের খতম করার জন্যে সেই এলাকায় বুধবারও দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই জারি রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ডোডা জেলার সেনা ঘাঁটিতে হামলার আগে মঙ্গলবার রাতে এবার গ্রামের মধ্যে ঢুকে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। তাতে এক নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। জখম আরও দু’জন। খবর পেয়ে সেনা বাহিনী পাল্টা অভিযানে নেমে এক জঙ্গিকে খতম করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার একটি গ্রামে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের ডোডা জেলার সেনা ছাউনিতে হানা দেয় সন্ত্রাসবাদীরা। জম্মু ও কাশ্মীর জোনের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার আনন্দ জৈন দু’টি ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন।
দুই দিনের ব্যবধানে ফের জম্মু কাশ্মীরে জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটায় এবং যেভাবে সাধারণ মানুষকে নিশানা করে জঙ্গিরা হত্যালীলা শুরু করেছে তাতে জনমানসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ৯ জুন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি হামলায় মোট ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফের নতুন করে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, জঙ্গি মোকাবিলায় সমগ্র এলাকা জুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে তল্লাশি শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদেরও আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।