জম্মু ও কাশ্মীরে এবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং স্বার্থের জন্য ক্ষমতার খেলা বন্ধ হবে, এমনটাই আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা রদ করা এবং এটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের হয়ে সওয়াল করতে গিয়েই ওই কথা বলেন মােদি।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুজরাতে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ আজ (৩১ অক্টোবর ২০১৯) থেকে একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রতিমূর্তি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানান। এই বিশালাকায় মূর্তিটির তিনি গত বছর উদ্বোধন করেছিলেন। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আমাদের গর্ব এবং পরিচয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী মােদি ।
১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাতে জন্মগ্রহন করেছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল। দিনটিকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবেও পালন করছে বিজেপি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও দিল্লিতে সর্দার প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানান। রাজধানী দিল্লিতে অমিত শাহ বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মেরি কমের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে ‘রান ফর ইউনিটি’ নামের ম্যারাথন দৌড়ের সূচনা করেন। হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরণের ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসতি অঞ্চল হিসাবে ঘােষণা করা ৩১ অক্টোবর, ২০১৯ থেকেই। প্রসঙ্গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার ঘােষণা করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর এখন থেকে আর রাজ্য হিসাবে বিবেচিত হবে না। ৩১ অক্টোবর ২০১৯ থেকেই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল সেটি।
২০১৪ সাল কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনটিকে জাতীয় একতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে মােদি সরকার। বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে পালিত হয়েছে লৌহপুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৪ তম জন্মদিবস। এদিন সকালে দিল্লিতে লৌহপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। অন্যদিকে গুজরাতের কেভাডিয়ায় এক বছর আগে উন্মােচিত হওয়া সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।
১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাতে জন্মগ্রহন করেছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ক্ষমতায় আসার পরই এই দিনটিতে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে পালন করেছে বিজেপি। এদিন দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও দিল্লিতে সদার প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানান। শুধু তাই নয় এদিন আবারও গুজরাতে সর্দারের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থিত সকলের সঙ্গে দেশের একতার জন্য শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।
এরপরই এদিন গুজরাতের রাষ্ট্রীয় একতা দিবস-এর বিশেষ কুচকাওয়াচেও অংশ নেন মােদি। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, দেশকে এক সূত্রে বাঁধার প্রথম কাজ শুরু করেন রামনায় সর্দার প্যাটেল। আর সেই এক দেশ ও ভারতীয় হওয়ার গৌরব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যার হাত ধরেই গড়ে উঠবে একক ভারত। সারা বিশ্ব ভারতের কথা শােনে তার কারণ ভারত এক রাষ্ট্র। বিবিধতার মধ্যেও ভারত বিশ্বের অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। সারা বিশ্বে ভারতের এই বিভিন্নতা দেখে অবাক হয় যা আমাদের দেশের সংস্কৃতি বলে এদিন বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রীয় একতা দিবসে ফের একবার নাম না করে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সমালাচনায় সরব হন মােদি। বলেন দেশের একতাকে বারংবার নিশানা করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণের এই একতার বলে সেই চেষ্টা বারে বারে হয়েছে বিফল। আর তাই ১৩০ কোটি ভারতীকে একযােগে এই সমস্যার সামনে রুখে দাঁড়াবার ডাক এদিন ফের একবার দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন আবারও জম্মু কাশ্মীর থেকে তুলে নেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারার পক্ষে সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি । সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্য কাশ্মীর থেকে তােলা হয়েছে ৩৭০ ধারা বলে এদিন বলেন মােদি। তিনি বলেন, দশকের পর দশক সংবিধানের এই ধারা দেশের মানুষের মধ্যে একটা অস্থায়ী প্রাচীর গড়ে তুলেছিল। বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ ভাবে লােপ করা হল। সদার প্যাটেলেরও এই স্বপ্ন ছিল আর তাই তিনি করেছেন।
৫ আগস্ট সংসদে যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল সেই সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত লৌহপুরুষকে এদিন অর্পন করেন বলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখেরর সব সরকারি কর্মচারিরা দেশের অন্য সব রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের মত সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা পাবেন। এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনের বিশ্বাস গড়ে তােলার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন দেশের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। যা লাঠির দমে নয় আলােচনার বলে। এদিন আবারও আধার, জিএসটি সহ একাধিক পরিষেবার প্রসঙ্গ টেনে একক রাষ্ট্রের পক্ষেই সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী মােদি। সর্দারের কথা টেনে ইউনিটির লক্ষ্য দেশের কর্মকান্ডকে অগ্রসর করার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন ফের একবার স্বচ্ছতা অভিযানের বিপুল সাফল্যের জন্য দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা, জল সঞ্চয় এমনকী পরিবেশ দূষণ থেকে প্রকৃতিকে বাঁচাতে প্লাস্টিক ত্যাগ করার কর্মসূচিকে দেশের জনগণ নিজেদের দায়িত্ব হিসাবে গ্রহন করেছে। আর এটাই হল একক দেশের লক্ষ্য বলে এদিন আবারও বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ।