পুলওয়ামা হামলায় জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপালের ‘গােয়েন্দা ব্যর্থতা’র তত্ত্ব খারিজ করল কেন্দ্র

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক (Photo: IANS)

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় করে ওঠা উচিত ছিল, সেই প্রশ্ন তখন লােকসভা নির্বাচনের ঢক্কানিনাদে হারিয়ে গেল। তার জায়গা নিল নির্বাচনী প্রচারে বাহুবলী জাতীয়তাবাদের হুঙ্কার।

যে প্রশ্ন সেদিন লােকসভা ভােটের শােরগােলের মাঝে চাপা পড়ে গিয়েছিল কিংবা হয়তাে চাপা দেওয়া হয়েছিল, সে প্রশ্ন তখন উঠলে বিপাকে পড়ত মােদি সরকার এবং লােকসভা ভােটের প্রক্রিয়া চলার মাঝে বিপাকে পড়ত বিজেপি এবং বিপাকে পড়তেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।

সেই প্রশ্ন কিন্তু তুলে দিয়ে দ্বিতীয় মােদি সরকারকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। কিন্তু ভােটের প্রচারের হাঙ্গামায় সে প্রশ্ন কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিল।


একজন সন্ত্রাসবাদী এত পরিমাণ আরডিএক্স নিয়ে কীভাবে সামরিক বাহিনীর এত কাছাকাছি চলে এসে বিস্ফোরণ ঘটাল, যেখানে মারা গেলেন ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান।

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক সরকারের ঠিক এই স্পর্শকাতর জায়গায় মােক্ষম ঘা দিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল অংশত গােয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য। যাকে বলা হয় ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর।

সত্যপাল মালিকের এই বক্তব্যের পর বিড়ম্বনায় পড়েনি মােদি সরকার কারণ মিডিয়ায় সত্যপাল মালিকের এই বক্তব্য তেমন প্রচার পায়নি। তবে সংসদ চলাকালীন বুধবার সংসদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিশন রেড্ডি রাজ্যপালের বক্তব্য সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন।

তিনি সংসদে বলেছেন, পুলওয়ামা হামলার জন্য গােয়েন্দা ব্যর্থতা দায়ী নয়। তবে দায়ী কে , এই প্রশ্নে না গিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে মদতপুষ্ট জঙ্গিরাই এই হামলা ঘটিয়েছিল।

কিন্তু রাজ্যপাল সরাসরি মন্তব্য করেছিলেন এই হামলার জন্য অংশত দায়ী আমাদের গােয়েন্দা ব্যর্থতা এবং সেই কারণে একজন আত্মঘাতী জইশ জঙ্গি বিস্ফোরক বােঝাই গাড়ি নিয়ে সিআরপিএফ কনভয়ে ঢুকে পড়তে পেরেছিল।

যখন রেড্ডিকে প্রশ্ন করা হয় যে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার জন্য কি গােয়েন্দা ব্যর্থতা দায়ী, তিনি উত্তরে বলেন, গত তিন দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্তের ওপার থেকে মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কারণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। বিগত কয়েক বছরে আমরা একাধিক সন্ত্রাসবাদীদের নিকেষ করতে পেরেছি।

রেড্ডি আরও বলেন, পুলওয়ামা সন্ত্রাসী আক্রমণের তদন্ত করছে এনআইএ এবং তারা মূল যড়যন্ত্রীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। চিহ্নিত করা গেছে তাদেরও, যারা এই হামলার জন্য গাড়ি সরবরাহ করেছিল।

পুলওয়ামা হামলার কয়েকদিন পরেই সংবাদমাধ্যমকে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন আমরা বিস্ফোরক ভর্তি গাড়িকে আগে থেকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করছি। আমরা জানতাম না যে ফিদায়ীন হামলা হতে পারে, সেটা অবশ্যই আমাদের গোয়ন্দাদের আংশিক ব্যর্থতা।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে মারা যায় জইশ-এর জঙ্গি সাজ্জাদ মকবুল ভাট, যার মারুতি ইকো ভ্যান পুলওয়ামায়া জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল।

পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী সাজ্জাদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ পুলওয়ামা হামলার ৮ দিন পর জঙ্গিদের খাতায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল বলেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা স্থানীয় জঙ্গিদের নিকেশ করছে বটে, কিন্তু আমাদের কাছে গােয়েন্দা সূত্রে কোনও খবর ছিল না যে তাদের আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এদিন মালিকের এই বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়েছে সরকার।