• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

জেলে কয়েদিদেরও জাত বিচার, অবিলম্বে আচরণবিধি সংশোধনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট 

সংশোধনাগারের অন্দরে জাতপাতের ভিত্তিতে কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। বৃহস্পতিবার এমনই রায় দিল শীর্ষ আদালত। দেশের শীর্ষ আদালত তার রায়ে জানিয়েছে,  সংশোধনাগারগুলিতে জাতপাত-নির্ভর যে আচরণবিধি পালন করা হয়ে আসছে তা অসাংবিধানিক।এই অসাংবিধানিক আচরণ তিন মাসের মধ্যে বন্ধ করতে রাজ্য সরকারগুলিকে পদক্ষেপ করতে হবে।

সংশোধনাগারের অন্দরে জাতপাতের ভিত্তিতে কোনরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। বৃহস্পতিবার এমনই রায় দিল শীর্ষ আদালত। দেশের শীর্ষ আদালত তার রায়ে জানিয়েছে,  সংশোধনাগারগুলিতে জাতপাত-নির্ভর যে আচরণবিধি পালন করা হয়ে আসছে তা অসাংবিধানিক।এই অসাংবিধানিক আচরণ তিন মাসের মধ্যে বন্ধ করতে রাজ্য সরকারগুলিকে পদক্ষেপ করতে হবে। দেশের প্রতিটি রাজ্যের সরকারকে সংশোধনাগারের ভিতরের আচরণবিধি বা ‘প্রিজন ম্যানুয়াল’ সংশোধন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই রায় দেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। 

এক জনস্বার্থের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অনেক রাজ্যে সংশোধনাগারের অন্দরের আচরণবিধিতে জাতের ভিত্তিতে কাজের বিভাজনের উল্লেখ রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সংশোধনাগারের অন্দরে বন্দিদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিভুক্ত মানুষ থাকেন। বিশেষ করে তপশিলি জাতি ও উপজাতি, আদিবাসী, সংখ্যালঘু বিভিন্ন জনজাতির মানুষ থাকেন। কিন্তু এঁদের ক্ষেত্রে যে বিভেদমূলক আচরণ করা হয়। 

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে দায়ের হওয়া মামলায় বলা হয়েছিল, সংশোধনাগারে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতের বিচার করা হয়। সাজা প্রাপ্ত বন্দিদের দিয়ে নানা ধরনের কাজকর্ম করানো হয়। সেই কাজের বিনিময়ে তাঁরা পারিশ্রমিক পান। একটি সংস্থা দেশের একাধিক সংশোধনাগারের তথ্য পরিসংখ্যান মারফত দেখিয়েছে, ব্রাহ্মণ, কায়স্তদের শারীরিক শ্রমের কাজ খুব একটা দেওয়া হয় না। যদিও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের কি ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হবে তা নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু উচ্চবর্ণের আসামিদের সহজ কাজ দেওয়া হয়। নিচু জাত বলে চিহ্নিতদের রান্না করা, শৌচাগার পরিস্কার, অসুস্থ বন্দিদের সেবাযত্ন করার কাজ দেওয়া হয়।এই আচরণবিধি দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, সংশোধনাগারে সকলেই কয়েদি। তাই কাজের ক্ষেত্রে গরিব-বড়লোক, নিচু জাত, উঁচু জাত দেখা হবে না। সব কয়েদিকেই  ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব ধরনের কাজের দায়িত্ব দিতে হবে। আদালতের নির্দেশ, সংশোধনাগারের অন্দরে থাকা-খাওয়া বা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের জন্য বন্দিদের জাতিভিত্তিক কোনওরকম বৈষম্য রাখা চলবে না। 

এদিনের এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। বেঞ্চ জানায়, ‘জাতপাতের ভিত্তিতে তৈরি করা যে কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভেদ ঔপনিবেশিক মানসিকতার সাক্ষ্য বহন করে। সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সংশোধনাগারের অন্দরের পরিবেশ মানবিক হতে হবে। আবাসিকদের মানসিক ও শারীরিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট করতে হবে।’

আদালতের পক্ষ থেকে দেশের সব রাজ্যের সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনও সংশোধনাগারে এখনও এমন বিভেদমূলক আচরণ করা হয় কিনা, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগারের আচরণবিধি সংশোধন করতে হবে এবং পুরো বিষয়টি নিয়ে আগামী তিনমাসের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

পাশা[পাশি, সংশোধনাগারের অন্দরে যাতে কোনও আবাসিকের উপর জাতিগত কারণে কোনওরকম বৈষম্যমূলক আচরণ না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকেও নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ২০১৬ সালে কেন্দ্র যে ‘মডেল প্রিজন রুলস’ বা সংশোধনাগারের জন্য আদর্শ আচরণবিধি চালু করেছিল, সেখানেও সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই আচরণবিধিও জাতিভিত্তিক পক্ষপাতিত্বকে প্রশ্রয় দিতে পারে।