রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের ১৬ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। এদিন কমিটির প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ ভাণ্ডার খোলার তারিখ প্রস্তাব করেন। তাঁর বক্তব্য, আগামী ১৪ জুলাই খোলা হোক জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে রত্ন ভাণ্ডার খোলার দিন নির্ধারিত হয়। কমিটির প্রধান, ওড়িশা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ রথের তত্ত্বাবধানেই পুরীর রত্ন ভাণ্ডারের সোনাদানার পরিমাপ করা হবে। ৪৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা এই ভাণ্ডারে কত রত্ন রয়েছে তার হিসেবনিকেশ জানতে উদগ্রীব জগন্নাথ ভক্ত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই ।
বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বৈঠকে বসতে চলেছে। এরপর এই প্রস্তাব যাবে রাজ্য সরকারের টেবিল। সরকার অনুমোদন করলে তবেই চূড়ান্ত ঘোষণা করা হবে।’ কমিটিকে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর তৈরির কথাও জানিয়েছিল সরকার। এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে স্থির হয়েছে আগামী ১৪ জুলাই রত্ন ভাণ্ডার খোলার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সরকারের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। কী ভাবে মেরামতির কাজ হবে এবং রত্ন ভাণ্ডারের সোনাদানার পরিমাপ করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ বিচারপতি বিশ্বনাথ রথের সংযোজন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে যে ডুপ্লিকেট চাবি রয়েছে সেটি দিয়ে রত্ন ভাণ্ডার খোলা হবে। তবে যদি সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে রত্ন ভাণ্ডারের তালা ভেঙে ফেলা হবে।’ কিছু কাজের জন্য জগন্নাথের সমস্ত অলঙ্কারাদি অন্যত্র সরাতে হবে। সে বিষয়েও সরকারের পরামর্শ ও অনুমোদন চাওয়া হবে। তিনি আরও জানান, রত্নাবলির মূল্য নির্ধারণ ও কোনটি কোন ধাতু বা রত্ন, তা চেনার কাজে সাহায্য করার জন্য জহুরির সাহায্য নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে ডুপ্লিকেট চাবিটি জমা করার অনুরোধ জানিয়েছে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি। বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ বলেন, ‘রত্ন ভাণ্ডার খোলা এবং সোনাদানা পরিমাপ কিংবা সংস্কারের কাজ চলাকালীন কোনওভাবেই যাতে জগন্নাথদেবের দর্শন বন্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। নির্ঝঞ্ঝাট দর্শন যাতে সম্ভব হয় তার জন্য পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত করা হবে।’
ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন আশ্বস্ত করে জানান, আগামী ১৯ জুলাই মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুণ্ডিচা মন্দির থেকে উলটো রথে ফিরবেন জগন্নাথদেব, বলরাম এবং দেবী সুভদ্রা। তিন দেবতার শ্রী মন্দিরে ফেরার আগেই রত্ন ভাণ্ডারের সংস্কারের কাজ শেষ হবে বলে জানান মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘উলটো রথে তিন দেবতার মন্দিরে ফেরার আগেই রত্ন ভাণ্ডারের সংস্কারের কাজ শেষ করব আমরা। তার মধ্যেই চলবে সোনাদানা পরিমাপের কাজে।’ একইসঙ্গে রত্ন ভাণ্ডারের সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে লিখে রাখা হবে।ওড়িশার বিজেপি সরকারের প্রতিশ্রুতি, প্রতি বছর রত্ন ভাণ্ডার এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহ সংস্কারের কাজ করা হবে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং তাদের গাইডলাইন মেনেই বার্ষিক এই সংস্কার চলবে শ্রী মন্দিরে।
পুরী সার্কলের এএসআইয়ের সুপার দিবিশাদ গড়নায়ক জানান, রত্নভাণ্ডারের গঠনগত অবস্থা খতিয়ে দেখবে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। গতবছর বাইরের দেওয়ালে বেশকিছু ফাটল এবং জোড় দেওয়া এলাকায় চিড় ধরেছে বলে দেখা গিয়েছিল। এই ফাটলগুলি থেকে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে ভিতরে পড়তে পারে। সবমিলিয়ে বহু প্রাচীন এই রত্নভাণ্ডারের অবস্থা ভালো নয় বলে জানান গড়নায়ক।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহের কাছেই রয়েছে রত্নভাণ্ডার। এটাই মন্দিরের সবথেকে দামি প্রকোষ্ঠ। যুগ যুগ ধরে এখানে জমা হয়ে রয়েছে, জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার রত্নরাজি। হিরে, পান্না, চুনী, মুক্তোখচিত স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার। এমন অনেক গয়না আছে, যা এখন দুষ্প্রাপ্য।
এই রত্নভাণ্ডারের দুটি প্রকোষ্ঠ আছে। বাইরেরটি বিভিন্ন পালাপার্বণে, বিশেষ করে জগন্নাথের স্বর্ণবেশের সময় খোলা থাকে । কিন্তু, অন্দর মহলটি ১৯৭৮ সাল থেকে বন্ধ । জগন্নাথ মন্দিরের আইন অনুযায়ী, তিন বছর অন্তর এই প্রকোষ্ঠের অডিট হওয়ার কথা থাকলেও অডিট হয়নি।